থমথমে: চোপড়ায় পুলিশ পিকেট। বন্ধের পরিস্থিতি গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
সোমবার চোপড়ায় গিয়েছিলেন ইসলামপুরের মহকুমাশাসক দফতরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট থেণ্ডুপ শেরপা। উদ্দেশ্য, কংগ্রেস কর্মীর খুনের ঘটনায় যাতে আর নতুন করে উত্তেজনা না ছড়ায় তা নিশ্চিত করা। তবে সেখানে ক্ষোভে মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। থেণ্ডুপকে দেখে চটে গিয়ে তাঁর উপরেই চড়াও হয় উত্তেজিত জনতা। এলাকা থেকে ফিরে যান তিনি।
রবিবার কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যুকে ঘিরে এখনও থমথমে চোপড়া। এলাকার হাটবাজারও ছিল বন্ধ। রাস্তায় গাড়িও তেমন ছিল না। কাজেই বন্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল এলাকায়। যে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে লক্ষ্মীপুর, চাকলাগছ এলাকায় প্রচুর পুলিশ ছিল। ছিলেন চোপড়া, ইসলামপুর-সহ একাধিক থানার আধিকারিকেরাও। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত সাতজনকে ইসলামপুর মহকুমা আদালতে তুলেছিল পুলিশ। তাদের তিন জনকে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতে দেওয়া হলেও বাকিদের ১৪ দিনের জেল হেফাজত দিয়েছে ইসলামপুর মহকুমা অতিরিক্ত মুখ্য ও দায়রা আদালতের বিচারক। ধৃতদের বিরুদ্ধে, মারামারি, খুন ও অস্ত্র আইনের ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।
এ দিন সকালে দেহ পৌঁছয় নিহত মহম্মদ সমিরুলের বাড়িতে। ওই এলাকায় দেখা গিয়েছিল পুলিশি টহলদারিও। ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মহম্মদ জেসিবি সহ ৩৭ জনের নামে অভিযোগ জমা পড়েছে।
এ দিন থেণ্ডুপকে বাসিন্দারা জানান, পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়মবহির্ভূত ভাবেই হয়েছে। সেই কারণে নির্বাচন ঘোষণার পরে তালা ঝুলিয়েছিলেন এলাকার কংগ্রেস ও সিপিএম জোটের সমর্থকেরা। সেই তালা খোলানোর পাশাপাশি নতুন বোর্ড গঠনের কাজ করেন এই ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। তাই এ দিন হাতের কাছেই পেয়েই ক্ষোভ উগরে দেন এলাকার বাসিন্দারা। এ দিন থেণ্ডুপ বলেন, ‘‘এর আগে পঞ্চায়েত খোলা থেকে সমস্ত কাজই সরকারি নির্দেশে করেছি। কিন্তু এ দিন কিছু উত্তেজিত জনতা আমাকে দেখেই ক্ষোভ দেখাতে থাকেন।’’ কংগ্রেসের চোপড়া ব্লক সভাপতি অশোক রায় বলেন, ‘‘ওই ম্যাজিস্ট্রেটের উপর ক্ষোভ রয়েছে পঞ্চায়েত গঠন নিয়েই।’’ তবে অশোক আরও জানান, এলাকার কিছু নিরীহ লোককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এ দিকে, চোপড়ায় আহত কংগ্রেস নেতা আবুল হোসেন উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে ভর্তি। তিনি অভিযোগ করেছেন, ছক কষেই তাঁর উপর আক্রমণ হয়েছিল। রবিবার দুপুরে চোপড়ার লক্ষ্মীপুরে তার উপর আক্রমণে মারাত্মক জখম ওই নেতাকে প্রথমে চোপড়া হাসপাতাল ও পরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়। তাঁর হাত ও পায়ে আঘাত রয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁ পা ভেঙে গিয়েছে তাঁর। ডান পায়ের হাড়েও চিড় রয়েছে। তবে তিনি বিপন্মুক্ত বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আমি কাঠগাঁ থেকে শেষ পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়েছিলাম কংগ্রেসের হয়ে। লক্ষ্মীপুরে যাচ্ছিলাম আমাদের সহকর্মী সমিরুলকে গুলি করার খবর পেয়ে। মাঝপথে মিঠাপুকুর এলাকায় ৫ জন বন্দুক, কুড়ুল আর ক্যারিব্যাগে করে বোমা এনেছিল। ঘিরে ধরে বন্দুকের বাট দিয়ে প্রচণ্ড মারধর করে।’’ প্রায় ২৪ ঘণ্টা হল প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে আবুল হোসেনকে মেঝেতেই রাখা হয়েছে ওই ওয়ার্ডে। শয্যা দিতে পারেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।