পাচার নিয়ে বৈঠক। — নিজস্ব চিত্র
ভারতে পুরনো ৫০০/১০০০ টাকার নোট বাতিলের জেরে নেপালের নাগরিকেরা সমস্যায় পড়েছেন বলে জানালেন কলকাতায় নিযুক্ত নেপালের কনসল জেনারেল একনারায়ণ আরিয়ল। পাচারের পর উদ্ধার হওয়া শিশু-কিশোর, নারীদের দেশে ফেরানো ও হোমের পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার শিলিগুড়ির স্টেট গেস্ট হাউসে একটি বৈঠক হয়। টাকার প্রসঙ্গে কনসল জেনারেল বলেন, ‘‘নেপালের সঙ্গে ভারতের খোলা সীমান্ত রয়েছে। আমাদের দেশের লোকজন নানা কাজে এ দেশে আসেন। নোট বাতিলের জেরে সমস্যা তো হচ্ছেই। আমরা বিভিন্ন স্তরে বিষয়টি জানিয়েছি। সমস্যা যত দ্রুত মেটে তত ভাল।’’
এ দিনের বৈঠকে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি, ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড প্রোটেকশন অফিসার (ডিসিপিও)-সহ নানা অফিসারেরা উপস্থিত ছিলেন। শিলিগুড়িতে নেপালের কনসল জেনারেলের একটি দফতর তৈরি বা আলাদা একজন নোডাল অফিসার নিয়োগের দাবি ওঠে। বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা জানান, কোনও শিশু বা সাবালক উদ্ধার হলে তাকে হোমে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু তার পরিচয়, বাড়ির ঠিকানা, অভিভাবকদের খোঁজ করতে অনেক সময় কেটে যায়। ৬-৭ মাসও পার হয়ে যায়। সেই সময় উদ্ধার করা শিশু বা সাবালকেরা শেল্টার হোম থেকে পালানোরও চেষ্টা করে। নেপালের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অনেক সময় সমস্যা হয়। সেই জন্য একজন নোডাল অফিসার বা নেপালের কনসলের দফতর উত্তরবঙ্গে থাকাটা জরুরি হয়ে গিয়েছে।
দার্জিলিঙের ডিসিপিও মৃণাল ঘোষ জানান, এখনও ১৩ জন নেপালের বাসিন্দা এ পারে বিভিন্ন হোমে আছেন। এদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। এ জেলায় সরকারি হোম নেই। তেমনই নেপালের সঙ্গে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রেও অনেক সময়ই সমস্যা হয়। এ দিনের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, দুই তরফে সরকারি স্তরে একটি যৌথ টাস্কফোর্স, কনসল জেনারেলের দফতরে জানানোর আলাদা ইমেল আইডি তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে কয়েক জন প্রতিনিধি কনসল জেনারেলকে জানান, এ দেশের বহু তরুণ-তরুণীকে নানা কাজের জন্য বিদেশে পাঠানো হয়। অনেক সময় তার মধ্যে পাচার চক্রও কাজ করে। তদন্তে দেখা যায়, এজেন্সিগুলি নেপালের। তেমনই, জাল পাসপোর্টের বিষয়টিও দেখা দরকার।
গত দু’দিন ধরে নেপালের কনসল জেনারেল শিলিগুড়িতে আছেন। তিনি কনসার্নের শেল্টার হোমও ঘুরে দেখেছেন। সংস্থার প্রতিনিধিরাই এ দিনের বৈঠকে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। কাঞ্চনজঙ্ঘা উদ্ধার কেন্দ্র, সিনি বা কালিম্পঙের বাল সুরক্ষা অভিযানের সদস্যরা জানান, পাচার হওয়া বা উদ্ধার হওয়া, সব ক্ষেত্রেই শিলিগুড়ি করিডরের কাজ করে। এখানে একটি সরকারি হোম অত্যন্ত জরুরি। জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। নেপালকেও উদ্যোগী হওয়ার কথা বলা হয়।
বৈঠকের পর কনসল জেনারেল জানান, নেপালে দারিদ্র্য রয়েছে। ভূমিকম্পের ফলেও অনেক সমস্যা রয়েছে। আবার খোলা সীমান্তে এপার-ওপার করতে গিয়ে শিশুরা, মেয়েরা এ দিকে চলে আসছেন। পাচারও চলছে। এই সংখ্যাটাই বেশি। উল্টো দিকে, ভারত থেকে নেপালে গিয়ে উদ্ধারের সংখ্যা কম। তবে উদ্ধার যেখানেই হোক, দ্রুত তাদের বাড়ি পাঠানোটাই গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশের মধ্যে সরকারিস্ত রে আলোচনা করে, সেটা যাতে দ্রুত করা যায় তাই দেখা হচ্ছে বলে বৈঠকে জানা যায়।