সমতলে কোনও সাইবার থানা বা সেল নেই দার্জিলিং জেলা পুলিশের। শিলিগুড়ি কমিশনারেটে সাইবার অপরাধ দমন করার ব্যবস্থা থাকলেও, তার চৌহুদ্দি পেরোলেই এমন অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশ একরকম নিধিরাম সর্দার। তাই প্রায়ই সমস্যায় পড়ছেন বাসিন্দারা। এটিএম কার্ডের জালিয়াতি হোক বা ভুয়ো ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মামলা, ফোনে মহিলাদের উত্ত্যক্ত করা থেকে সোশ্যালসাইটের আপত্তিকর মেসেজ নিয়ে অভিযোগ এলে সমস্যা বাড়ছে অফিসারদেরও। নিজেরা তদন্ত শুরু করে কোনও সূত্র না পেলে মামলা দিয়ে দেওয়া হয় সিআইডিকে। এতে অনেক সময় চলে যাওয়ায় অভিযুক্তরাও পার পেয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, ‘‘দ্রুত সাইবার সেল করার চেষ্টা চলছে। আপাতত সিআইডির সহযোগিতা নিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।’’
গত মঙ্গলবার এমনই একটি ঘটনা সামনে এসেছে। নকশালবাড়ির শান্তিনগরের এক বাসিন্দার অভিযোগ, তাঁর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মেয়ের ছবি এবং নাম দিয়ে ভুয়ো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট করে অশ্লীল মেসেজ এবং কথোপকথন করা হচ্ছে। প্রথমে থানায় অভিযোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। পরে অভিযোগ নেওয়া হলেও অ্যাকাউন্টটি পরীক্ষার পরিকাঠামো নেই বলে অফিসারেরা জানিয়েছেন। আপাতত তথ্য প্রযুক্তি ধারায় মামলা করে, ইন্সপেক্টর স্তরের অফিসারকে তদন্তকারী হিসাবে রেখে দায় সেরেছেন অফিসারেরা। ওই বাসিন্দার কথায়, ‘‘মেয়ে আতঙ্কিত। লজ্জা ও ভয়ে বাড়ির বাইরে যাচ্ছে না। পুলিশ বলছে, সময় লাগবে। মেয়ে যদি কিছু করে বসে, সেই ভয় পাচ্ছি!’’
কয়েক মাস কয়েক আগে নকশালবাড়ির এক বধূকে সোশ্যাল সাইটে নানা মেসেজ পাঠিয়ে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ ওঠে এক যুবকের বিরুদ্ধে। আপত্তিকর মেসেজ পেয়ে ভেঙে পড়েন মহিলাও। শেষে স্থানীয় পুলিশের দ্বারস্থ হন। কিন্তু সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত পরিকাঠামো না থাকায় মামলা এগোয়নি। পরে, ওই যুবকের কর্মস্থল শিলিগুড়ির কমিশনারেট এলাকায় অভিযোগ করেন। শিলিগুড়ি পুলিশ তদন্ত শুরু করলে ধরা পড়ে ওই যুবক। তেমনই, এটিএম কার্ডের জালিয়াতি করে এক অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারির কর্মীর টাকা লুঠের অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু বিভিন্ন লেনদেন, অনলাইন শপিংয়ের সূত্র ধরে দিল্লি, বিহার, লখনউ পর্যন্ত তদন্তরকারীরা পৌঁছলেও মামলা শেষ হয়নি। টাকাও উদ্ধার হয়নি।
পুলিশ সূত্রের খবর, দার্জিলিং পুলিশের ফাঁসিদেওয়া, নকশালবাড়ি এবং খড়িবাড়ি গ্রামীণ থানায় প্রতি দু’মাসে তথ্য প্রযুক্তি আইনে অন্তত ১০টি মামলা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাহাড়ে নথি পাঠিয়ে অফিসারদের পরামর্শ চাওয়া হচ্ছে। অথবা মামলা সিআইডিকে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শুধুমাত্র, মোবাইলের ফোনের ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে দার্জিলিং পুলিশ সুপারের দফতরের পরিকাঠামো ব্যবহার করে শনাক্ত করা যায়।