মিষ্টি, রোলের খদ্দের কমছে

বাজার সেরে মিষ্টির দোকানে ঢুঁ মারার অভ্যেস ছিল কারও। রাতে বাড়ি ফেরার সময়ে ফাস্ট ফুড কিনে নিয়ে যাওয়া ছিল কারও পছন্দ। খুচরো সমস্যায় সে সব বিলাসিতা বন্ধ। যার প্রভাব পড়েছে বাণিজ্যে। ক্রেতা কমেছে দোকানে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৩৮
Share:

বাজার সেরে মিষ্টির দোকানে ঢুঁ মারার অভ্যেস ছিল কারও। রাতে বাড়ি ফেরার সময়ে ফাস্ট ফুড কিনে নিয়ে যাওয়া ছিল কারও পছন্দ। খুচরো সমস্যায় সে সব বিলাসিতা বন্ধ।

Advertisement

যার প্রভাব পড়েছে বাণিজ্যে। ক্রেতা কমেছে দোকানে। শুধু খাবারের দোকান নয়, পোশাক এমনকী হার্ডওয়ারের ব্যবসাতে নোট-বাতিলের সরাসরি প্রভাব পড়েছে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি সহ গোটা উত্তরবঙ্গেই। সমস্যা বিক্রেতাদেরও। ব্যবসা চালাতে, প্রথম দু’দিন অনেকেই পাঁচশো এবং হাজারের নোট নিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যঙ্ক খুললেও দিনে মাত্র চার হাজার টাকার নোট বদলের সুযোগ মিলছে, তাও লম্বা লাইন। পাঁচশো বা হাজার টাকা নিয়ে ফিরতি খুচরো দেওয়া সম্ভব নয় বলে ক্রেতাদের ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন বিক্রেতারাও।

শিলিগুড়ির বিধান রোডের একটি বাজার ভবনে দু’দিন ধরে চেনা ভিড় উধাও। একটি পোশাকের দোকানের ম্যানেজার তাপস বসু দাবি করেন, ক্রেতার সংখ্যা অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। তাপসবাবু বলেন, ‘‘গত বুধবার আমরা পাঁচশো, হাজার সব নোটই নিয়েছি। কিন্তু সমস্যা শুরু হল তার পরদিন থেকে। খুচরো জোগাড় করতে পারছি না। অচেনা ক্রেতার কাছে বকেয়া রাখা যাচ্ছে না। তাই অনেক ক্রেতাকে ফিরিয়ে দিয়েছি। এ দিন শুক্রবার ক্রেতার সংখ্যা এক ধাক্কায় কমে যায়।’’ হাতে খুচরো না থাকাতেই প্রয়োজন থাকলেও ক্রেতারা বাজারমুখি হচ্ছে না বলে দাবি ব্যবসায়ীদেরও।

Advertisement

শুধু শিলিগুড়ি শহরেই দৈনন্দিন লেনদেন এক ধাক্কায় ৭৫ শতাংশ কমে গিয়েছে বলে দাবি বণিক সংগঠনের। উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহৎ বণিক সংগঠন ফোসিনের দাবি শহরে প্রতিদিন অন্তত দশ কোটি টাকার লেনদেন হয়। এক ধাক্কায় তা আড়াই কোটিতে নেমে এসেছে।

ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস সামগ্রিক উত্তরবঙ্গের ব্যবসা নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশ্বজিৎবাবুর কথায়, ‘‘উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন শহরে যে লেনদেন হয় তার ৮০ শতাংশই বড় নোটে। অর্থাৎ পাঁচশো এবং হাজারের নোটে। সেই নোট বাতিল হয়ে যাওয়াতেই ক্রেতা বিক্রেতারা সমস্যায় পড়েছেন। তাই ক্রেতারা বাধ্য হয়েই দোকান থেকে মুখ ফিরিয়েছেন। নিতান্ত যে জিনিস না কিনলে দিন চলবে না, সেগুলিই কিনছেন। তাতেই ব্যবসা মার খাচ্ছে।’’

গত বৃহস্পতিবার থেকেই রায়গঞ্জের মোহনবাটি, বালুরঘাটের তহবাজার অথবা জলপাইগুড়ির দিনবাজার অন্য দিনের তুলনায় সুনসান। জলপাইগুড়ি জেলা ব্যবসায়ী সমিতির তরফে সাধন বসু বলেন, ‘‘যে টুকু ব্যবসা হচ্ছে, তার সিংহভাগই বাকিতে। সে কারণে ব্যবসায়ীরাও বেশি করে পণ্য মজুত করতে পারছে না। নানা ভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে।’’ শহরে যে টাকার লেনদেন হচ্ছে গ্রামে তাও হচ্ছে না। দিনহাটার মুদি থেকে হার্ডওয়ার দোকান সবেতেই ক্রেতা কমেছে। দিনহাটা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রাণা গোস্বামীর কথায়, ‘‘একশো টাকার পণ্য কিনেও লোকে হাজার টাকা দিচ্ছে, খুচরো পাব কোথা থেকে। এ দিন তো ক্রেতারাও আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। এই কদিন যা ক্ষতি হচ্ছে, তাতে নোট পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও, আমাদের ক্ষতি পূরণ হবে না।’’

খুচরো অভাবে বাজার থেকে সরে গিয়েছেন শখের ক্রেতারাও। শিলিগুড়ির মহানন্দা পাড়ায় ছোট খাবারের হোটেল চালান গৌরাঙ্গ সরকার। তিনি দাবি করেন, অনেকেই মাংস, তরকা প্যাকেট করে নিয়ে যেতেন। তিনি বলেন, ‘‘বাড়িতে হালকা খাবার নিয়ে যাওয়ার ক্রেতাদের দু’দিন ধরে দেখা নেই। এমন চললে হোটেল বন্ধ রাখতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement