তৃণমূলের ‘বাড়ি ঘেরাও’ কর্মসূচির আগে নিশীথ প্রামাণিকের বাড়ির বাইরে পুলিশের টহলদারি। নিজস্ব চিত্র
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তথা কোচবিহারের বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকের ‘বাড়ি ঘেরাও’ করার কর্মসূচির জেরে সিপিএম প্রভাবিত সামাজিক ন্যায় মঞ্চের সম্মেলনের জায়গা বদলাল। আজ, ররিবার দিনহাটার ভেটাগুড়িতে ওই কর্মসূচির ডাক দিয়েছে তৃণমূল। একই দিনে ভেটাগুড়িতে সামাজিক ন্যায় মঞ্চের দ্বিতীয় জেলা সম্মেলন হওয়ার পরিকল্পনা ছিল। বিকেলে ভেটাগুড়ি ময়দানে সভার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছিল। তার মধ্যেই নিশীথের বাড়ি ঘেরাওয়ের ডাক দেয় তৃণমূল। বিজেপির তরফেও তা নিয়ে পাল্টা হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। বিজেপি-তৃণমূল শিবিরের তরজায় রাজনৈতিক ‘অশান্তির’ আশঙ্কা করেই দিনহাটা শহরে ন্যায় মঞ্চের কর্মসূচি সরানো হয়েছে।
সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক তথা সামাজিক ন্যায় মঞ্চের উপদেষ্টা অনন্ত রায় সাফ বলেন, “যা অবস্থা, তাতে তৃণমূল-বিজেপির মধ্যে গোলমালের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আমরা কোনও অশান্তির মধ্যে পড়ার ঝুঁকি নিতে চাই না। মঞ্চের সম্মেলন তাই ভেটাগুড়ির বদলে দিনহাটায় হবে।”
পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের তরফেও তৎপরতা শুরু হয়েছে। শনিবার ভেটাগুড়ি এলাকায় কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে বিরাট পুলিশ বাহিনী টহলদারি করেছে। আজ, রবিবার সকাল থেকে এলাকায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হবে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুমার সানিরাজ বলেন, ‘‘সমস্ত সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত পুলিশ এলাকায় থাকবে।"
নিশীথের ‘বাড়ি ঘেরাও’ কর্মসূচিতে ২৫ হাজার লোক জড়ো করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিকের দাবি, “আমাদের কর্মসূচিতে ২৫ হাজার মানুষের ভিড় হবে। ফলে, সিপিএমের ৫০-৬০ জন লোক ভিড়ে রাস্তা হারিয়ে ফেলবেন। কর্মসূচির স্থান বদলে ওঁরা ঠিকই করেছেন।” বিজেপির কোচবিহার জেলা সম্পাদক বিরাজ বসু আবার বলেন, “আগে সিপিএম অশান্তি করত। এখন তৃণমূল করছে।”
তৃণমূলের ওই কর্মসূচি ঘিরে তেতে উঠেছে জেলার রাজনীতি। বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি সুকুমার রায় বলেন, “তৃণমূল বাড়ি ঘেরাও শুরু করলে, জনগণ ওদের দলের নেতাদের বাড়িও ঘেরাও করবে।” দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক, উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ পাল্টা বলেন, “জনগণই তো ভেটাগুড়ির কর্মসূচিতে থাকছে। আইন মেনে কর্মসূচি করা হচ্ছে। দিনহাটার বিজেপি শহর সভাপতি অজয় রায় এক ধাপ এগিয়ে বলেন, “আমরা নজর রাখব, ১৯ ফেব্রুয়ারির ওই কর্মসূচিতে কোন নেতা, কর্মীরা অংশ নিচ্ছেন। আগামী দিনে তাঁদের বাড়িও ঘেরাও হবে।” দিনহাটা শহর তৃণমূলের সভাপতি বিশু ধর বলেন, “উস্কানিমূলক কথা বলে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ব্যাহত করার চেষ্টায় লাভ হবে না।” শনিবার ওয়েলফেয়ার পার্টির রাজ্য সহ সভাপতি আমিনাল হক বলেন, “বিচারবিভাগীয় ব্যবস্থা যেখানে আছে, সেখানে কোনও জনপ্রতিনিধি বা মন্ত্রীর বাড়ি না ঘেরাও করাই ভাল।” তৃণমূলের এক নেতার অবশ্য দাবি, বাড়ি ঘেরাও মানে বাড়িতে ঢোকা নয়। আইন মেনে যতটা দূরত্ব রাখতে হয়, তা মেনেই কর্মসূচি হওয়ার কথা। তাই মঞ্চের কর্মসূচির স্থানবদলেও ভেটাগুড়ি আজ নজরে।