Coronavirus

কোথাও রেকর্ড বিক্রি কোথাও কমল ভিড়

জেলা আবগারি দফতরের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম দিনের তিন ঘণ্টায় দেশি মদ বিক্রি হয়েছে ১৬ হাজার লিটার, বিদেশি মদ ১৫ হাজার লিটার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২০ ০৭:৪৫
Share:

শিলিগুড়িতে মদের দোকানের বাইরে লাইন।—ছবি এএফপি।

লকডাউনের ৪১ দিন পরে মদের দোকান খুলল। এবং প্রথম তিন ঘণ্টায় প্রায় পৌনে দু’কোটি টাকার মদ বিক্রি হল জলপাইগুড়িতে। প্রথম দিনের ইনিংসে বিদেশি মদকে পিছনে ফেলল দেশি মদ। আবগারি দফতরের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গত সোমবার দেশি মদের বিক্রি বেশি ছিল জেলায়। সবচেয়ে কম বিক্রি হয়েছে বিয়ার। সোমবার দুপুরে তিন ঘণ্টা খোলা থাকলেও মঙ্গলবার সেই মেয়াদ বেড়ে যায়। এ দিন দুপুর বারোটা থেকে সন্ধ্যে সাতটা পর্যন্ত মদের দোকান খোলা ছিল। সকালের দিকে লম্বা লাইন থাকলেও, দুপুরের পর ভিড় কমতে থাকে। এ দিনও দুপুরে আকাশ কালো করে বৃষ্টি হয়েছে এক পশলা। ঝড়ও ওঠে। তবে তাতেও মদের দোকানের সামনে লাইন ছত্রভঙ্গ হয়নি। বরং আকাশে মেঘ দেখে অনেকে ছাতা নিয়েই লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন।

Advertisement

আবগারি দফতর সূত্রে খবর, সোমবার দুপুর তিনটে থেকে সন্ধে ছ’টা, এই তিন ঘণ্টায় জলপাইগুড়ি জেলায় ১ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকার মদ বিক্রি হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধে পর্যন্ত পাওয়া খবরে, বিক্রির পরিমাণ পৌঁছতে চলেছে ৩ কোটি টাকার কাছাকাছি। সে হিসেবে প্রথম দুদিনেই জলপাইগুড়ি জেলায় প্রায় পৌনে পাঁচ কোটি টাকার মদ বিক্রি হবে বলে আশা। আবগারি দফতর সূত্রের খবর, সোমবার জেলার বহু মদের দোকান খোলেনি। মঙ্গলবারও সব দোকান খোলেনি, খুললেও দ্রুত মদ শেষ হয়ে যায়। আজ বুধবার থেকে সব দোকান খোলা সম্ভব হবে বলে তাদের দাবি। সে ক্ষেত্রে রাজস্ব আদায় আরও বাড়বে বলেও আশা করছে দফতর। এ দিকে নির্দেশিকায় বারবার মদের হোম ডেলিভারি করতে জোর দিয়েছে রাজ্য সরকার। লকডাউনের সময়ে মদের দোকানের সামনে লম্বা লাইনের ছবি নিয়ে বির্তকও বাড়ছে। অনেকে লাইনে দাঁড়াতে দ্বিধাও করছেন। সূত্রের খবর, এ সব বিবেচনা করে অনলাইন অ্যাপলিকেশন চালু করেছে সরকার। আপাতত সেখানে খুচরো বিক্রেতারা নাম রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। তবে সাত দিনের মধ্যে সাধারণ গ্রাহকও সেই অ্যাপলিকেশনের মাধ্যমে অনলাইনে মদ কিনতে পারবেন।

জেলা আবগারি দফতরের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম দিনের তিন ঘণ্টায় দেশি মদ বিক্রি হয়েছে ১৬ হাজার লিটার, বিদেশি মদ ১৫ হাজার লিটার। বিয়ার বিক্রি হয়েছে দেড় হাজার লিটারের কাছাকাছি। আবগারি দফতরের সদরের আধিকারিক সুশান্ত বক্সী জানান, সোমবারে জেলায় ৬২টি দোকান খোলা ছিল। মঙ্গলবার ৭৮টি দোকান থেকে মদ বিক্রি করা হয়।

Advertisement

সোমবার থেকে জেলার সব কটি মদ তৈরির কারখানা এবং বটলিং প্লান্ট খুলে দেওয়া হয়েছে। সরকারি গুদাম থেকেও স্বাভাবিক ভাবে মদ বের হচ্ছে। জেলায় এখন ১৪৭টি মদের অনুমোদিত দোকান রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি দোকান জ্যোতিনগরের কনটেনমেন্ট জ়োনে পড়ে। সেখান দোকান খোলার অনুমতি নেই। কিছু দোকান শপিং মল বা একটি বাজার ভবনের মধ্যে রয়েছে। সেগুলিও খোলার অনুমতি নেই।

রেকর্ড দার্জিলিঙেও

৪১ দিন পর মদের দোকান খুলতেই তিন ঘণ্টায় রেকর্ড পরিমাণ মদ বিক্রি হল দার্জিলিং জেলায়। পাহাড় ও সমতল মিলিয়ে মোট ৫০ লক্ষ টাকার মদ বিক্রি হয়েছে বলে আবগারি দফতর সূত্রে দাবি। এমনিতে শিলিগুড়িতে স্বাভাবিক সময়ে মাসে বিদেশি এবং দেশি মিলিয়ে গড়ে প্রায় ৩ লক্ষ লিটার মদ বিক্রি হয়। ৪১ দিন বন্ধ থাকায় ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা বলে দাবি করছেন আবগারি দফতরের কর্তারা। তবে এই দু’দিনে মাটিগাড়ায় কনটেনমেন্ট জ়োন বলে পরিচিত মেডিক্যাল আবাসনের কাছে মদের দোকান খোলা হয়নি।

শহরে মোট ২০টি মদের দোকানের মধ্যে সোমবার ১৩টি খুলেছিল। সেগুলিতে ব্যাপক ভিড় থাকায় সামাজিক দূরত্ব অনেক জায়গাতেই মানা হয়নি বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার চিত্রটা ছিল উল্টো। এ দিন বেলা ১২টায় দোকান খোলার পর একটু ভিড় হলেও তা কিছুক্ষণের মধ্যেই হালকা হয়ে যায়। বিকেল পর্যন্ত অনেক দোকানেই লাইন ছিল না। আবগারি দফতরের দার্জিলিং জেলার ডেপুটি কালেক্টর বিজয় টিগ্গা বলেন, ‘‘সোমবার দীর্ঘদিন পর দোকান খুলেছিল বলে ওই রকম ভিড় ছিল। তা ধীরে ধীরে কমবে।’’

মদ বিক্রেতাদের সংগঠন সূত্রে দাবি করা হয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় মজুত থেকে মদ বিক্রি হয়েছে। কোথাও একসঙ্গে দু’টি বোতল, তো কোথাও তার বেশিই কিনে নিয়ে গিয়েছেন গ্রাহকরা। তার জেরে মঙ্গলবার চাহিদাও ছিল একেবারেই কম। তা ছাড়াও মজুত না থাকার জন্য যে ক’টি দোকান সোমবার খুলতে পারেননি মালিকরা, এদিন সেগুলিও খুলেছিল। ফলে লকডাউনের মধ্যেও পুরোপুরি স্বাভাবিক ছবিই এদিনকার মদ বিক্রিতে ধরা পড়েছে শহরে।

মঙ্গলবার আরও বেশি করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার উপর জোর দেন আবগারি আধিকারিকরা। সোমবার বিকেলের পর থেকেই শিলিগুড়ির বিভিন্ন গুদামে কোম্পানিগুলি থেকে মদ আসতে শুরু করেছে পিকআপ ভ্যানে করে। এদিনও সেই ছবি অব্যাহত ছিল। কয়েকটি দোকানে লকডাউনের আগেই হঠাৎ মদ বিক্রি হয়েছে বলে এখন মজুতের পরিমাণ কম রয়েছে বলে জানান মদ বিক্রেতাদের সংগঠন। শিলিগুড়ি পুরসভার ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে কনটেনমেন্ট জ়োন রয়েছে। তবে সেখানে কোনও মদের দোকান নেই। কিন্তু মাটিগাড়া থানার সুশ্রুতনগরে মেডিক্যাল কলেজ আবাসনকে কেন্দ্র করে তৈরি কনটেনমেন্ট জ়োন এলাকার তিন কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে ১২টি মদের দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান আবগারি কর্তারা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement