ফাইল চিত্র
দেশ জুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আবহে আতঙ্ক ছড়িয়েছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন চা বাগান এলাকা থেকে ভিন্রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে। গত তিন দিন ধরে ডুয়ার্স-তরাইয়ের সব চা বাগানেই শুরু হয়েছে ‘ঘর ওয়াপসি’ বা ঘরে ফিরে আসা। কাজ খুঁজতে বাইরে যাওয়া মানুষগুলো ঘরে ফেরায় পরিবারের মুখে হাসি ফুটলেও, আতঙ্ক ছড়াচ্ছে এলাকায়। চা বলয়ের বাসিন্দাদের প্রশ্ন, ফিরে আসা কারও শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থাকলে তা কী ভাবে জানা যাবে? জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের দাবি, ভিন্রাজ্য থেকে ফেরা অন্তত তিরিশ জন তালিকা হাতে রয়েছে, তাঁদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। যদিও বেসরকারি হিসেবে, প্রতিদিন শয়ে শয়ে বাসিন্দারা ফিরছেন। তাঁদের সংক্রমণ রয়েছে কিনা সে পরীক্ষার কোনও ব্যবস্থা নেই বলে দাবি। তাতেই বাড়ছে আতঙ্ক।
জলপাইগুড়ির জেলাশাসক অভিষেক তিওয়ারি বলেন, “স্টেশন, বাসস্ট্যান্ডে প্রাথমিক পরীক্ষা হওয়ার কথা। জেলা প্রশাসনের তরফে নজর রাখা হচ্ছে। আমরা প্রায় তিরিশজনের তালিকা পেয়েছি, যাঁরা বাইরে থেকে ফিরেছেন। তাঁদের নজরে রাখা হচ্ছে। ঘরে রেখেই নজরে রাখা হচ্ছে তাঁদের। স্বাস্থ্য দফতর সব চা বাগানে নজরদারি, সমীক্ষা চালাবে।”
চা বাগান এলাকার বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ কাজের খোঁজে ভিন্রাজ্যে যান। বেশিরভাগেরই গন্তব্য হয় কেরল, দিল্লি, মহারাষ্ট্র। সাধারণত হোটেলে, রেস্তরাঁ, কারখানা এবং নির্মাণ শিল্পে কাজ করেন তাঁরা। দেশে করোনাসংক্রমণ শুরু হতেই বিভিন্ন সংস্থা বন্ধ হতে শুরু করেছে। কিছু কিছু শহর থেকে বহিরাগতদের বাড়ি চলে যেতে বলা হচ্ছে বলে দাবি। সেই কারণেই ফিরছেন অনেকে। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া রায়পুর চা বাগানে দিল্লি থেকে ফিরেছেন এক যুবক। সেখানে এক রেস্তরাঁয় কাজ করতেন তিনি। বললেন, “দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ছেলেরা দিল্লিতে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতাম। করোনাসংক্রমণের পরে বাড়ির মালিক সকলকে চলে যেতে বলেছেন, ওখানকার পুরসভার কাউন্সিলর এসেও বলেছেন। তাই চলে এলাম।” কেউ ফিরছেন ভয়ে ভয়ে। মহারাষ্ট্র থেকে লক্ষ্মীপাড়া চা বাগানে ফেরা পদম লামা বলেন, “আমরা যেখানে থাকতাম সকলের সর্দি-জ্বর। সকলকে ধরে ধরে হাসপাতালে ভর্তি করানো হচ্ছে। ভয়ে বাড়ি চলে এসেছি।”
বানারহাটের বাসিন্দা তথা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্ণধার ভিক্টর বসুর কথায়, “গোটা চা বলয় বারুদের স্তূপের ওপর বসে রয়েছে বলা যায়। জেলা প্রশাসনকে চা বাগানে দ্রুত সক্রিয় হতে হবে। প্রতিদিন দলে দলে ছেলে-মেয়েরা বাইরে থেকে ফিরছেন। তাঁদের সকলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে।” বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা হলেও স্টেশন বা বাস টার্মিনাসে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী নামছেন তাঁদের পরীক্ষার কোনও বালাই নেই। জলপাইগুড়ি টাউন বা রোড স্টেশন, ধূপগুড়ি, মালবাজার কোনও স্টেশনেই স্বাস্থ্যপরীক্ষার ব্যবস্থা চোখে পড়ছে না। কাজেই কেউ সংক্রমণ নিয়ে ফিরছেন কিনা তা প্রশাসনের কাছে অজানা।