প্রতীকী ছবি
করোনাসংক্রমণের জেরে এখন থেকেই ধাক্কা টের পাচ্ছে দেশের চা শিল্প। চা ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা এর বেশিরভাগ প্রভাবই পোহাতে হবে অসম ও ডুয়ার্সের চা-কে। চা ব্যবসায়ীদের একাংশ জানাচ্ছেন, সম্প্রতি চিনে ডুয়ার্স-অসমের কালো চায়ের বাজার বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছিল। জার্মানি এবং জাপানেও এ দেশের চা নতুন বাজার ধরতে শুরু করেছিল। দার্জিলিঙের বড় পাতার অর্থোডক্স চায়েরও শক্তিশালী বাজার রয়েছে। কিন্তু করোনার জেরে আপাতত এই সব দেশে চায়ের রফতানি বন্ধ। চা শিল্পে কাছে যা সঙ্কেত তাতে অন্তত মাস ছয়েকের আগে কোনও খাদ্য সামগ্রী আর্ন্তজাতিক সীমান্ত টপকাতে পারবে না। করোনা আক্রান্ত দেশগুলি মিলিয়ে প্রায় ৬কোটি ৫০ লক্ষ কেজি চা রফতানি হতো। চলতি বছরে এই চা দেশে থেকে গেলে, হু হু করে চা পাতার দাম কমতে শুরু করবে। যার সরাসরি প্রভাব পড়বে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিঙের চা শিল্পে।
গত বছর চিন থেকে একাধিক চা বিপণন দল জলপাইগুড়ি এসে কালো চা তৈরির প্রযুক্তি দেখে গিয়েছিল। জলপাইগুড়ির বেশ কিছু ক্ষুদ্র চা বাগানের সঙ্গে চুক্তি করেছিল চিনা সংস্থাগুলি। চিনে সবুজ চা তথা গ্রিন টি বেশি উৎপাদিত হয়। চিনের নয়া প্রজন্ম ডুয়ার্সের কড়া সিটিসি চায়ের দিকে ঝুঁকেছে বলে বিপণন সংস্থাগুলি দাবি করেছিল। গত দু’বছরের চা রফতানির তথ্য দেখলেও তা মালুম হয়। চা পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালে চিনে রফতানি হয়েছিল মাত্র ৬০ লক্ষ কেজি চা। ২০১৭ সালে বেড়ে হয় ৮০ লক্ষ কেজি। ২০১৮ সালে ১কোটি কেজি। ২০১৯-২০তে চিনে গিয়েছে প্রায় ১ কোটি ৩ লক্ষ কেজি চা পাতা। এর পুরোটাই সিটিসি অর্থাৎ ডুয়ার্স এবং অসমের কালো চা। এর মধ্যে ছোট বাগানের চা পাতাও রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত করোনা আক্রান্ত দেশের তালিকায় সবার উপরে রয়েছে চিন। তারপরেই ইরান, জাপান এবং জার্মানি। ইরানে প্রায় ৪ কোটি মিলিয়ন কেজি চা গিয়েছে গত বছর। যার বাজার মূল্য ১১২৭ কোটি। চিনে গত বছর প্রায় ২০০ কোটি টাকার চা গিয়েছে। জার্মানি এবং জাপান ধরলে মোট ৪০০ কোটি টাকার চা রফতানি হয়েছিল। চা পর্ষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান অরুণ কুমার রায়ের কথায়, “রফতানিতে প্রভাব তো পড়বেই। আমরা কতটা কাটিয়ে উঠতে পারব তা বুঝতে আরও সময় লাগবে।“ চা পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বাজারে ১১০ কোটি কেজি চায়ের চাহিদা রয়েছে প্রতিবছর। দেশের বাজার শক্তিশালী হওয়ায় ক্ষতি সামলে দেওয়া যাবে বলে ডেপুটি চেয়ারম্যানের আশা। তিনি বলেন, “রফতানিকারী দেশগুলির সঙ্গে আমাদের চুক্তি রয়েছে। ই-মেলেও নতুন চুক্তি করা যায়, তার জন্য দেশে আসার প্রয়োজন নেই।”
ছোট চা চাষিদের সর্বভারতীয় সংগঠনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তীর কথায়, “রফতানি বন্ধ হলে সবচেয়ে ক্ষতি হবে আমাদের। ছোট বাগানের অর্থনৈতিক ক্ষমতা পেশি নয়, আঘাত কতটা সামলানো যাবে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।” চা পর্ষদের চেয়ারম্যান প্রভাত বেজবড়ুয়ার কথায়, “রফতানি বন্ধ হলে ক্ষতি তো
হবেই। কিন্তু এখনও একটাও বরাত বাতিল হয়নি।’’