—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কিছু দিন আগেই আগুনের উত্তাপ থেকে শামুকখোল পাখি বাঁচাতে ছুটে গিয়েছিলেন। এ বার বাণেশ্বরে মাইক হাতে ‘মোহন’ রক্ষায় সচেতনতার বার্তা দিলেন কোচবিহারের পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য। চলতি অগস্টে কয়ে কদিন ধরেই ওই এলাকায় সরেজমিনে যাচ্ছিলেন তিনি। এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে, ক্যামেরা হাতে ছবি তুলে মোহনদের ব্যাপারে খুঁটিনাটি তথ্যও জোগাড় করেন। শনিবার সেই মোহনদের রক্ষায় বানেশ্বরে আয়োজিত একটি সেমিনারে মাইক হাতে বার্তা দেন তিনি।
বাণেশ্বর খাবসা হাইস্কুলে ওই সেমিনারের আয়োজন করেছিল মোহন রক্ষা কমিটি। স্কুল, কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, এলাকার বাসিন্দারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে পরিবেশের স্বার্থে মোহন রক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন পুলিশ সুপার। দেন মোহনদের ‘ভালবাসা’র বার্তা। কোচবিহারের পুলিশ সুপার বলেন, “বিপন্নপ্রায় প্রজাতির মোহনদের রক্ষা করা পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্রের জন্য ভীষণ জরুরি। আরও বেশি সচেতনতা দরকার। তবে সবচেয়ে জরুরি ওদের প্রতি ভালবাসা। বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রী, নতুন প্রজন্মকে ওই প্রাণীদের ভালবাসতে শেখানোও প্রয়োজন।”
মোহন বিরল প্রজাতির ‘কাছিম’। অতিবিপন্ন প্রজাতির তালিকাভুক্ত ওই প্রাণীর পোশাকি নাম ‘ব্ল্যাক সফট শেল টার্টেল’। বাণেশ্বর এলাকার শিবদিঘি-সহ বেশ কিছু জলাশয় ছাড়া ওই প্রজাতির কাছিম রয়েছে মূলত বাংলাদেশ ও অসমের একটি জায়গায়। বাণেশ্বরে মোহন নিয়ে বাসিন্দাদের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। দেবতা জ্ঞানে অনেকেই মোহনের পুজো করেন। কয়েক মাস আগে মোহন মৃত্যুর প্রতিবাদে এলাকায় বনধ ডাকা হয়েছিল। অভিযোগ, সড়ক পারাপারের সময় দুর্ঘটনা-সহ নানা কারণে বেশ কিছু মোহনের মৃত্যু হয়েছে। পরবর্তীতে মোহন রক্ষায় পুলিশের তরফেও সিভিক কর্মী নিয়োগ করে নজরদারির ব্যবস্থা হয়। রাস্তায় দুর্ঘটনা এড়াতে দেওয়া হয় সাইনবোর্ডও। এমনকি মোহন রক্ষা কমিটির স্বেচ্ছাসেবকরাও নজরদারির দায়িত্বে নামেন।
পুলিশ সূত্রে দাবি, গত বছর যেখানে অন্তত ৫০টি মোহনের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। এ বছর এখনও পর্যন্ত সেই সংখ্যা ৬টি। মোহন যাতায়াতের করিডরে যানবাহনের যাতায়াতে গতি নিয়ন্ত্রণ, বোর্ড লাগানো-সহ নানা কাজ করা হয়েছে। মোহন সুরক্ষা কমিটির সভাপতি পরিমল বর্মণ বলেন, “মোহন রক্ষায় পুলিশ সুপারের চেষ্টা প্রশংসনীয়। তবে সর্বস্তরে সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে। সেই দায়িত্বের বিষয়গুলি তুলে ধরতেই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। দারুণ সাড়া মিলেছে।” পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাসগ্রুপের সম্পাদক অরুপ গুহ বলেন, “কোচবিহার শহরের রাস্তার কাজের সময় শামুকখোলের আশ্রয় নেওয়া গাছের নীচে পিচ গলানোর সময় সেই আগুনে বিপাকে পড়ে যাওয়া শামুকখোল বাঁচাতে পুলিশ সুপার ছুটে গিয়েছিলেন। জায়গা বদল হয় পিচ গলানোর। ওটা যে নিছক দেখানোর ব্যাপার ছিল না, তা মোহন রক্ষার উদ্যোগে আরও স্পষ্ট হয়েছে। মোহনকে ভালবাসতে শেখানোর বার্তাটাও গুরুত্বপূর্ণ।”