কোচবিহারের মেয়ে ‘মিস ইন্ডিয়া’

প্রিয়দর্শিনীর শহরে উচ্ছ্বাস

প্রিয়দর্শিনী চট্টোপাধ্যায় ‘মিস ইন্ডিয়া’ খেতাব জেতায় খুশির জোয়ারে ভাসছেন তাঁর শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত কোচবিহার শহরের বাসিন্দারা। শহরের নিউটাউন এলাকার নেতাজি রোড বাইলেন এলাকায় ছিল প্রিয়দর্শিনীর দাদু দেবদাস চক্রবর্তীর বাড়ি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:২৩
Share:

খেতাব জয়ের খবর দেখতে ব্যস্ত উৎসুক বাসিন্দারা। —নিজস্ব চিত্র

প্রিয়দর্শিনী চট্টোপাধ্যায় ‘মিস ইন্ডিয়া’ খেতাব জেতায় খুশির জোয়ারে ভাসছেন তাঁর শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত কোচবিহার শহরের বাসিন্দারা। শহরের নিউটাউন এলাকার নেতাজি রোড বাইলেন এলাকায় ছিল প্রিয়দর্শিনীর দাদু দেবদাস চক্রবর্তীর বাড়ি। সেই সূত্রেই তাঁর ছোটবেলার অনেকটা সময় কেটেছে সেখানে। পরে দাদু মারা যাওয়ার পরেও আত্মীয়দের টানে বহু বার কোচবিহারে এসেছেন। ভিড় ঠেলে রাসমেলা ঘুরে দেখা থেকে রাজবাড়িতে বেড়ানো কিংবা সাগরদিঘির পাড়ে আলুর চপের টানে মিশে গিয়েছেন অন্য সব সাধারণ মেয়েদের মতো। সেই মেয়েই মুম্বইয়ে আয়োজিত এফবিবি ফেমিনা ‘মিস ইন্ডিয়া– ২০১৬’ প্রতিযোগিতায় জেতায় খুশির হাওয়া শহরে।

Advertisement

এ দিন, নেতাজি রোড বাই লেনের যে বাড়িতে ছোটবেলায় প্রিয়দর্শিনী বহু বার এসেছেন, সেই বাড়ির প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, ‘বরকনদি’র (প্রিয়দর্শিনীর মা পাপিয়া চট্টোপাধ্যায়কে ওই নামে চেনেন এলাকার বাসিন্দারা) মেয়ের সাফল্য এলাকার গর্ব। খবর জানাজানি হতেই তাঁদের কেউ মোবাইলে নেট খুলে প্রিয়দর্শিনীর খেতাব জয়ের ছবি নিয়ে বসেছেন, কেউ আবার শাহরুখ খানের সঙ্গে তাঁর ছবি দেখে ভবিষ্যতের বলিউড অভিনেত্রীকে দেখার স্বপ্নে বিভোর। স্থানীয় বাসিন্দা রাজু হোসেন, বিশ্বজিৎ ধর বলেন, “এক দশকের বেশি সময় হবে এলাকার বাড়ি বিক্রি করেছেন পাপিয়াদির আত্মীয়েরা। তবে দীর্ঘ দিন এলাকায় থাকার সূত্রে প্রিয়দর্শিনী ‘ভাগ্নি’ বলে অনেকের কাছেই পরিচিত। ছোটবেলায় দেখা সেই ভাগ্নি একেব্বারে মিস ইন্ডিয়া খেতাব জিতেছে জেনে সত্যিই ভীষণ আনন্দ হচ্ছে।” কথা প্রায় কেড়ে নিয়ে পাশে দাঁড়ান কমলেশ গোস্বামী বলেন, “ভীষণ খুশির খবর। আগামী দিনে বলিউডের অভিনেত্রী হিসাবেও ওঁকে দেখতে চাই।”

এলাকার বাসিন্দা এক প্রবীণ সুবোধ রায় বলেন, “প্রিয়দর্শিনীর দাদু দেবদাসবাবু ছিলেন বিএসএনএলের পদস্থ কর্তা। এলাকায় সম্ভ্রান্ত পরিবার। তাঁর মৃত্যুর পর বাড়ি বিক্রি করে দেন তাঁরা। এখনও সবার কথা মনে আছে। ভাল লাগছে।” নেতাজি রোডের এক ব্যবসায়ী অপূর্ব নারায়ণ বলেন, “সেই ছোট্ট মেয়েটা এত বড় হয়ে গেল। গর্ব হচ্ছে।” বাসিন্দারা জানান, এক দশকের বেশি সময় আগে নেতাজি রোডের বাড়ি বিক্রির পর কোচবিহারের মীনাকুমারী চৌপথী লাগোয়া এলাকায় থাকেন প্রিয়দর্শিনীর দিদা অঞ্জলি চক্রবর্তী ও মাসি পম্পা চক্রবর্তী। সেখানেও বহু বার এসেছেন তিনি। গরমের ছুটি কিংবা অন্য সময় স্কুল বন্ধ হলেও কোচবিহারে চলে আসা ছিল নিয়মের মতো। অন্যদের মতো সাগরদিঘি পাড়ে কিংবা পঞ্চরঙ্গী মোড়ে চপের খোঁজে গিয়েছেন। রাজবাড়ির পার্কে পরিবারের লোকদের নিয়ে ঘুরেছেন। মদনমোহন মন্দিরে প্রণাম করেছেন। পরিচিতদের সঙ্গে জুড়েছেন ছোটবেলায় দেখা পুতনা রাক্ষসীর গল্প। ইচ্ছে মতো কোচবিহারের নানা রকমের মিষ্টি ছিল পছন্দের খাওয়া। মোবাইলে প্রিয়দর্শিনীর মা পাপিয়া দেবী বলেন, “মদনমোহনদেব ও বড়দেবি দুর্গার আশির্বাদে মেয়ের ওই সাফল্য। মদনমোহন মন্দিরে ভেটির সন্দেশ সব থেকে বেশি পছন্দ করে। কোচবিহার সহ পরিচিতদের বাড়িতে যাবে বলে ও মুখিয়ে রয়েছে।”

Advertisement

পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রিয়দর্শনীর বাবা প্রবীর চট্টোপাধ্যায়ের আদি বাড়ি অসমের ধুবুরিতে। কর্ম সূত্রে দীর্ঘ দিন গুহায়াটিতে থাকায় প্রিয়দর্শিনী সেখান থেকে ২০১৫ সালে উচ্চমাধ্যমিকে পাশ করেন প্রায় ৯৭ শতাংশ নম্বর নিয়ে। দিল্লিতে সমাজবিদ্যা নিয়ে ভর্তির পরে মডেলিংয়ের রুটিন নেশায় জোর দেন। এ বছরেই ফেব্রুয়ারিতে মিস দিল্লি খেতাব জেতেন। সবাইকে তাক লাগিয়ে জিতেছেন মিস ইন্ডিয়া খেতাবও। ফোনে যোগাযোগ করা হলে দিদা অঞ্জলিদেবী ও মাসি পম্পা চক্রবর্তী জানিয়েছেন, জেলার বাইরে আছেন প্রিয়দর্শিনীর খেতাব জয়ে গর্বে, আনন্দে উল্লসিত তাঁরাও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement