ছুটির দিনে মেয়র পারিষদ এবং কোর কমিটি ঘোষণা করলেন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য।—নিজস্ব চিত্র।
ছুটির দিনে প্রথমে দলীয় অফিসে বৈঠক করে ও পরে পুরসভার অফিস খুলিয়ে মেয়র পারিষদ এবং কোর কমিটির তালিকা ঘোষণা করলেন সদ্য নির্বাচিত মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। রবিবার দুপুরে এমনই ঘটনা ঘটেছে। যা কি না পুরসভার ইতিহাসে বেনজির বলে মনে করছেন অনেকেই। কারণ, যে সময়ে ঘোষণা হয়, তখন সিংহভাগ কাউন্সিলর, পুরসভার কর্মী-আধিকারিকদের ৯০ শতাংশ সাপ্তাহিক ছুটির কারণে অনুপস্থিত।
বিষয়টি জানাজানি হতেই সংশ্লিষ্ট অনেকেরই প্রশ্ন, এত তাড়াহুড়ো করে ছুটির দিনে অফিস খুলিয়ে কেন মেয়র পারিষদ ও কোর কমিটির তালিকা ঘোষণা করতে হল? এমনকী, যাঁর সমর্থনের জন্য বামেদের পক্ষে বোর্ড গড়াটা মসৃণ হয়েছে, সেই নির্দল কাউন্সিলর অরবিন্দ ঘোষকে কেন তালিকা ঘোষণার কথা আগাম জানানো হয়নি তা নিয়ে তাঁর অনুগামীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পছন্দসই দফতর না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ বাম শরিক ফরওযার্ড ব্লক ও আরএসপিও। ফলে, সন্ধ্যার পরে মেয়র পারিষদদের একাংশের দফতর বদলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মেয়র অশোকবাবু বলেছেন, ‘‘ক্ষোভ-বিক্ষোভের কোনও বিষয় নেই। আমরা সবাইকে নিয়ে ‘টিম’ হিসাবেই কাজ করব। আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রথমে যা বলেছিলাম, পরে কিছু দফতর অদলবদল করা হয়েছে। অরবিন্দবাবুর সঙ্গেও কথা হয়ে আছে। খুব দ্রুত কোর কমিটির বৈঠক হবে।’’ মেয়র জানান, এ দিন যে মেয়র পারিষদ গঠন করা হয়েছে, তা স্থায়ী কিছু নয়। ছ’মাসের মধ্যে কাজের পর্যালোচনা করা হবে। তার পরে প্রয়োজনে পারিষদ বদল বা পরিবর্তন করা হবে।
শিলিগুড়ি পুরসভা।
বামেদের অন্দরেও প্রশ্ন উঠেছে কোর কমিটি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে। তাঁদের অনেকে জানিয়েছেন, মেয়র, ডেপুটি মেয়র, অরবিন্দবাবু ছাড়া পাঁচজন মেয়র পারিষদকে কমিটিকে রাখা হয়েছে। কিন্তু পরিমল মিত্র বা কমল অগ্রবালদের ওই কমিটিতে রাখা হয়নি। সেই অর্থে কমিটি মেয়র পারিষদের কাজকর্ম কমিটিই পর্যালোচনা করবে। অর্থাৎ, তাঁরা নিজেদের কাজকর্ম নিজেরাই খতিয়ে দেখবেন। তাই সকল মেয়র পারিষদকে রেখেই কমিটি গড়াটা বাঞ্ছনীয় ছিল।
অরবিন্দবাবুর এলাকার লোকজনের অনেকের অভিযোগ, ‘অমুদাকে’ কোনও কিছু না জানিয়ে কমিটির ঘোষণা করাটা সৌজন্যের পরিচয় দেয় না। তাঁরা জানান, রবিবার দুপুরে পুরসভার দফতর খোলা হল। সেখানে বসে কমিটির ঘোষণা হল, অথচ তাঁকে কিছু জানানো হল না। অথচ পুরসভা থেকে অরবিন্দবাবু তথা অমুবাবুর বাড়ির হাঁটা পথে দূরত্ব বড়জোর ২০ মিনিট। তাঁকে ডেকে একসঙ্গে বসে কমিটি গঠন হলে ভাল হতো। অরবিন্দবাবুর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শুল্কা সরকার বলেন, ‘‘অমুদাকে এতটুকু সম্মান দেওয়াই যেত। ওঁকে সৌজন্যের খাতিরে ডাকলে ওয়ার্ডবাসী হিসেবে ভাল লাগত।’’ একইভাবে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শিশির রায়নাথ, রাজীব চৌধুরীরা বলেন, ‘‘ব্যক্তিগতভাবে মনে হচ্ছে, অমুদাকে সৌজন্য দেখানো হয়নি। কোনও কিছুর কথা উঠলে তখন তড়িঘড়ি ডাকাডাকি করা হচ্ছে।’’ এই প্রসঙ্গে অরবিন্দবাবু শুধু বলেছেন, ‘‘ওঁরা কে কী বলছেন জানি না। এখন মন্তব্য করার সময় নয়।’’
বাম শরিকদের ক্ষোভও কিছুটা প্রকাশ্যে এসেছে। আরএসপি নেতারা প্রত্যাশা মতই ডেপুটি মেযর পদ পেলেও ফরওয়ার্ড ব্লক নতুন মেয়র পারিষদ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ শুরু করে। এদিন বিকালে দলের নতুন মেয়র পারিষদ দুর্গা সিংহের বাড়িতে কর্মী সমর্থকেরা জমায়েত করে ক্ষোভ জানিয়েছেন। দলের নেতাদের অভিযোগ করেন, তাঁরা ডেপুটি মেয়রের দাবি করেও পরে তা থেকে সরেন। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ মেয়র পারিষদ পদ দেওয়া উচিত ছিল। তা করা প্রথমে করা হয়নি। ক্ষমতা পেতেই সিপিএম ফের পুরানো চেহারায় পিরছে বলে ফব নেতাদের কয়েকজনের অভিযোগ। চাপের মুখে রাতে ফের তড়িঘড়ি দফতর বদলের ঘোষণা করেন মেয়র। আরএসপি ডেপুটি মেয়রের পার্কিং দফতরটি নিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লককে দেওয়া হয়। সেই জায়গায় মেয়রের হাতে থাকে সম্পত্তি করের দফতরটি আরএসপি-র ডেপুটি মেয়রকে দেওয়া হয়।
ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক অনিরুদ্ধ বসু বলেন, ‘‘আমরা বাম ঐক্যের কথা মাথা রেখেই কাজ করি। অথচ ডেপুটি মেয়রের বদলে বস্তি উন্নয়ন বা বিল্ডিং চাওয়া হলেও তা দেওয়া হয়নি। এতে কর্মীরা ক্ষেপে যান।’’ আরএসপি-র জেলা সম্পাদক তাপস গোস্বামী বলেন, ‘‘বাম ঐক্যকে মাথায় রেখে সর্বসম্মত ভাবে সব হয়েছে।’’
এদিন সকাল থেকে জেলা বামফ্রন্টের নেতারা সিপিএমের দলীয় দফতরে বসে বিষয়গুলি নিয়ে বৈঠক করেন। তার পরে মেয়র পুরসভার গিয়ে আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে মেয়র পারিষদ এবং কোর কমিটির ঘোষণা করেন। ফ্রন্ট সূত্রের খবর, আজ, সোমবার দুপুরে মেয়র পারিষদদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হবে। অথচ রবিবার বিকাল অবধি তাঁদের পুরসভায় ডাকা তো দূরের কথা অনেককে কিছু জানানোই হয়নি। তাঁদের অনেকেই বিষয়টি সংবাদমাধ্যমের থেকে শুনেছেন বলে দাবি করেছেন।
বামেদের মহিলা কাউন্সিলরদের কয়েকজনও ক্ষুব্ধ। কারণ, ১১ জন মহিলা ভোটে জিতলেও শরিক হিসাবে দুর্গা সিংহ পদ পেয়েছেন। বাকিরা কেউ মেয়র পারিষদে ঠাঁই না পাওয়ায় দলের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। যেমন, স্নিগ্ধা হাজরা, রেবা সরকার, প্রীতিকণা বিশ্বাস, রাগিণী সিংহ, দীপা বিশ্বাস, শর্মিলা দাস, মৌসুমী হাজরা, গোলাপ রায় সহ অনেক সিপিএম নেত্রীর এলাকার লোকজনদের একাংশ একান্তে ক্ষোভ ও হতাশা জানিয়েছেন দলের নেতাদের কাছেই। মেয়র অবশ্য বলেছেন, ‘‘বরোগুলির দায়িত্ব ছাড়া একাধিক কমিটি গঠন হবে। সেখানে মহিলাদের গুরুত্ব দেওয়া হবে।’’