চলছে প্রতিবাদ। নিজস্ব চিত্র।
আর জি কর কাণ্ডের পরে কর্মক্ষেত্রে রাতে মেয়ে তথা মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে ‘রাত্তিরের সাথী’ বলে নির্দেশিকা পাঠিয়েছে রাজ্য। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে সেই নির্দেশিকা এসে পৌঁছেছে সোমবারই। তবে এই নির্দেশিকার কতটা কাজের হবে, কতটা মানা যাবে সে সব নিয়ে দু’রকম মতই ঘুরছে নার্স থেকে ছাত্রী, মহিলা চিকিৎসক বা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের প্রশাসনিক আধিকারিক মহলে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের সুপার সঞ্জয় মল্লিক বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশিকা আসার কথা। এ দিন ছুটি থাকায় তা দেখা হয়নি। নির্দেশিকাগুলো চালু হলে বোঝা যাবে, কোনওটায় সুবিধা বা অসুবিধা হচ্ছে কি না।’’
পড়ুয়া থেকে জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ মনে করেন, পুলিশ সক্রিয় না হলে ‘হেল্প নম্বর’ বা ‘অ্যাপ’ চালু করে বিশেষ লাভ নেই। কর্তৃপক্ষের একাংশের মতে, নির্দেশিকায় যেখানে যতটা সম্ভব রাতে মহিলাদের ‘ডিউটি’ না দেওয়ার কথা হয়েছে। কিন্তু নার্স বা চিকিৎসকদের কাজে তা করার উপায় নেই। আবার কিছু বিভাগ রয়েছে যেখানে জুনিয়র মহিলা চিকিৎসকই কেবল রয়েছেন। সেখানে পুরুষ চিকিৎসকের সঙ্গে এক যোগে ডিউটি দেওয়ার বিষয়টিও অসুবিধা হবে। সে ক্ষেত্রে একাধিক বিভাগ মিলিয়ে কী করে করা যেতে পারে, ভাবনা-চিন্তা করতে হবে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের ডিন সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘রাতের কোনও ডিউটি মহিলাদের না দিলে সমস্যা হবে হাসপাতালে। নার্স, মহিলা চিকিৎসকদের ওই ডিউটি করতেই হয়। পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো দরকার। সে সব দিক দেখা হচ্ছে।’’
অন্য দিকে, রাতের জন্য জারি করা সরকারি নির্দেশিকা ও ‘রাত্তিরের সাথী’ নির্দেশিকা মেনে নিতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন জলপাইগুড়ি মেডিক্যালের চিকিৎসকদের এক বড় অংশ। তাঁদের মতে, হাসপাতালের নিরাপত্তা শুধু মহিলাদের জন্য নয়, সকলের জন্যই তো নিরাপত্তা জরুরি। শুধু রাতের জন্যই নয়, যে কোনও মুহূর্তেই হাসপাতালে অরাজকতার পরিবেশ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এক সিনিয়র চিকিৎসক বলেন, ‘‘হাসপাতালে মহিলাদের পাশাপাশি পুরুষদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। উদ্বেগ নিয়ে চিকিৎসা করা যায় না।’’
জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল সূত্রের খবর, আরজি করের ঘটনার পরে নিরাপত্তার স্বার্থে ‘প্যানিক বাটন’ বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এ বিষয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলোর ব্যবস্থা করা, সিসি ক্যামেরা আরও বাড়ানো, চিকিৎসকদের জন্য বিশ্রামাগার, শৌচাগার, পানীয় জল এবং পুলিশ ফাঁড়ি বসানোর বিষয়েও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
মেডিক্যালের সুপার তথা ভাইস প্রিন্সিপাল কল্যাণ খান বলেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’