প্রতীকী ছবি।
একশো দিনের প্রকল্পের জব-কার্ডের তথ্যের সঙ্গে সে লোকের আধার কার্ডের তথ্য যাচাই হয়নি, শুক্রবার পর্যন্ত জলপাইগুড়িতে এমন নামের সংখ্যা প্রায় এমন ১ লক্ষ ১৩ হাজার। এই বিপুল সংখ্যক নামের মধ্যে বহু ‘ভুয়ো’ নাম ঢুকে রয়েছে বলেই তথ্য যাচাই করা যায়নি বলেঅভিযোগ বিরোধীদের। ভুয়ো নামের সংখ্যা কত তা এখনও জানতে পারেনি প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, জব-কার্ডে থাকা নামের সঙ্গে আধার কার্ডের তথ্য না মিললে, সে নাম কাজের তালিকা থেকে বাতিল করেদেওয়া হচ্ছে।
জলপাইগুড়ি জেলায় জব-কার্ডের সংখ্যা সাড়ে তিন লক্ষেরও বেশি। এক-একটি পরিবার পিছু একটি করে জব-কার্ড থাকে। জেলায় জব-কার্ডে নাম থাকা ব্যক্তিদের সংখ্যা প্রায় ছ’লক্ষ ১৫ হাজার। সকলকে আধার কার্ডের নম্বর দিয়ে জব-কার্ড করাতে হয়েছে, অথবা পুরোনো জব-কার্ড হলে, আধার কার্ড করে সেই নম্বর নথিভুক্ত করাতে হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে এ বার জব-কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ডের তথ্য ‘লিঙ্ক’ তথা যাচাই করাতে হচ্ছে। অর্থাৎ, একশো দিনের কাজের পোর্টালের সঙ্গে আধার কার্ডের সার্ভারের যোগ করা হয়েছে। কোনও ব্যক্তি প্রকৃতই তাঁরআধার কার্ডের নম্বর নথিভুক্ত করিয়েছেন কি না তা যেমন যাচাই হচ্ছে, তেমনই একটি আধার কার্ডের নম্বর একাধিক জব-কার্ডে রয়েছে কি না, তা-ও সামনে আসছে।
বিরোধীদের অভিযোগ, এতেই ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়েছে। আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে আধার সংযুক্তির নির্দেশ এসেছে। ডিসেম্বরের দু’দিন পেরিয়ে গেলেও জলপাইগুড়ি জেলায় এক লাখেরও বেশি নাম যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
প্রশাসন সূত্রের খবর, কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে একই আধার কার্ডের নম্বরে একাধিক জব-কার্ড রয়েছে সেগুলি বাদ দেওয়া হয়েছে। কোনও ক্ষেত্রে জব-কার্ডে থাকা আধার কার্ডের নম্বরের সঙ্গে জব-কার্ডধারী ব্যক্তির কোনও মিলই পাওয়া যায়নি। সে সব কার্ড বাতিল হয়েছে। এ ছাড়াও, লক্ষ নামের মধ্যে শুধু ভুয়ো নয়, বাইরে কাজে চলে যাওয়া ব্যক্তিদেরও নামও রয়েছে। কাজেই সবটাই যে ‘ভুয়ো’ তা বলা যাবে না বলে দাবি প্রশাসনিক কর্তাদের।
জলপাইগুড়িতে একশো দিনের কাজের প্রকল্প আধিকারিক সুচেতনা দাস বলেন, “স্বচ্ছতা আনতেই আধার কার্ড সংযুক্তি হয়েছে। অনেকশ্রমিক বাইরে কাজে চলে যাওয়ায়, তাঁদের তথ্য যাচাই হয়নি। এ ছাড়া, একই নম্বরে দুটো কার্ড বা নকল প্রতিলিপি থাকলে সেগুলি বাতিল করা হচ্ছে।”
প্রশাসনিক এই প্রক্রিয়া ঘিরে রাজনৈতিক তরজাও চরমে। জলপাইগুড়ি জেলায় পঞ্চায়েত সংখ্যা ৮০টি। তার মধ্যে প্রায় ৭০টি রাজ্যের শাসক দলের দখলে। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে জলপাইগুড়ি জেলা বিজেপি সভাপতি বাপি গোস্বামীর কটাক্ষ, “ঠিক ভাবে যাচাই করলে, এক লক্ষেরও বেশি ভুয়ো নাম বেরোবে। এ বার হিসেব করে দেখা যাক, এত দিন কত টাকা মজুরির নামে কোথায় গিয়েছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক সলিল আচার্যের মন্তব্য, “আমরা বারবার বলেছি, পঞ্চায়েতগুলো দুষ্কৃতী এবং দুর্নীতির আখড়া হয়েছে। এখন তা প্রমাণ হচ্ছে।”
তৃণমূলের জেলা সভাপতি মহুয়া গোপের মন্তব্য, “পঞ্চায়েত ভোটের আগে বাম-বিজেপি ভয়ে কাঁপছে। কোনও সংগঠন নেই। তাই যে কোনও বিষয়ে মনগড়া অভিযোগ তুলছে।”