বিমল গুরুং (বাঁ দিকে), অজয় এডওয়ার্ডস (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
এ বার দার্জিলিং পাহাড়ের রাজনীতিতে বিমল গুরুং বনাম অজয় এডওয়ার্ড ‘দ্বন্দ্ব’ শুরু হয়েছে। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতির সঙ্গে হামরো পার্টির সভাপতির বাকযুদ্ধ আরও কিছুদিন চলার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দার্জিলিঙের রাজনৈতিক স্তরে আলোচনা চলছে, দীপাবলির পরে পাহাড়ে নতুন দল বা মঞ্চের আত্মপ্রকাশ হতে পারে। আর একে ঘিরেই শুরু হয়েছে টানাপড়েন।
এর মধ্যে অজয়ের সঙ্গে তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগাযোগ ও সরকারের ‘মদতে’ নতুন দলের কথা নিয়ে গুরুং কটাক্ষ করেছেন বলে হামরো পার্টির একাংশের অভিযোগ। যা নিয়ে পাল্টা তোপ দেগেছেন অজয়ও। রবিবার তিনি দাবি করেন, ২০২০ সালে রাজ্যে ফিরে বিমল গুরুং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফের ২০২১ সালের ভোটে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চান বলে জানান। পাহাড়ে ফিরে তৃণমূলের কথা প্রথম কিছু দিন বললেও, পরে তিনি শাসক দলের পাশ থেকে পুরোপুরি সরে যান। অজয়ের কথায়, ‘‘আমি কারও সঙ্গে দেখা করিনি। এ সব নিয়ে রটনা চলছে! আর কে, কাকে মুখ্যমন্ত্রী করবে বলে এসেছিলেন, তা সবাই দেখেছেন। তাই কার, কোথায়, কী রয়েছে তা আমরাও জানি।’’ যদিও বিমল গুরুং এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তাঁর দলের এক কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা বলেছেন, ‘‘ঠিক সময় সভাপতি যা বলার বলবেন।’’
দলীয় সূত্রের খবর, পাহাড়ের রাজনীতিতে অনীত থাপার প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার বিরোধিতা করে ২০২২ সালে গুরুং, অজয়েরা এক মঞ্চে পাশাপাশি আসেন। তাঁদের সঙ্গে বিনয় তামাংও ছিলেন। পঞ্চায়েত এবং জিটিএ ভোটে নিজেদের মধ্যে ‘বোঝাপড়াও’ করেছিলেন বলে খবর। আর লোকসভা ভোটে গুরুং নতুন করে বিজেপির দিকে ঝুঁকে পড়েন। অজয় পথ চলা শুরু করেন কংগ্রেসের সঙ্গে। এর মধ্যে পাহাড়ে নতুন একটি দল বা মঞ্চ গড়া নিয়েও জোর আলোচনা চলছে। সেখানে অজয় এডওয়ার্ডকে সামনে রেখে এগোতে চাইছেন এক দল। কারণ, হামরো পার্টি এখনও নির্বাচন কমিশনের খাতায় সরকারি ভাবে নথিভুক্ত দল নয়। পার্টির রেজিস্ট্রেশনও হয়নি। অন্য পক্ষ গুরুংকেও মঞ্চে পেতে তৎপর। সকলের মূল লক্ষ্য, অনীত থাপার নেতৃত্বাধীন দলের বিকল্প হিসাবে নতুন মঞ্চকে তৈরি করা। যাঁরা আলাদা রাজ্যের মূল দাবি নিয়ে রাজনীতি করবে। সেখানে অজয়, গুরুংয়ের নাম নিয়ে নানা আলোচনা চলতেই দুই পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে ময়দানে নেমে পড়েছেন।
পাহাড়ের রাজনৈতিক নেতারা মনে করছেন, প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা তৃণমূলের পাশে থেকে লোকসভা ভোটে পাহাড়ে জিততে না পারলেও, বাকি সব স্তরে ক্ষমতায় রয়েছে। বিজেপি লোকসভায় জিতলেও, পাহাড়ে আর কোথাও সে ভাবে নেই। সেখানে গুরুং এবং অজয়ই এখন পাহাড়ের মূল বিরোধী নেতা। জিএনএলএফের মন ঘিসিং বা গোর্খা নেতা বিনয় তামাং একের পরে এক দল ছেড়ে সে দৌড়়ে পিছিয়ে গিয়েছেন। তাই আগামী বিধানসভার আগে পাহাড়ের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসাবে নিজেদের নতুন করে তুলে ধরতে মরিয়া গুরুং এবং অজয়।