এই ছাদে জমা জলই ধরে রাখা হবে। — নিজস্ব চিত্র
এ বার ধরে রাখা বৃষ্টির জল দিয়েই স্কুলে স্কুলে পড়ুয়াদের শৌচাগার সাফাইয়ের কাজ হবে কোচবিহারে। পরীক্ষামূলকভাবে একশো দিনের কাজ প্রকল্পের মাধ্যমে কোচবিহার জেলার ১০টি স্কুলে ওই কাজের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে এক লক্ষ টাকা। তার মধ্যে দিনহাটার ওকরাবাড়ি হাইস্কুলে গত বুধবার প্রকল্পের কাজের সূচনা হয়েছে। অন্য সবকটি স্কুলের কাজও আগামী তিন মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। স্বল্প খরচে পরীক্ষামূলকভাবে বৃষ্টির জল ধরে রেখে ব্যবহারের ওই পরিকল্পনা সফল হলে পরের বছর প্রতিটি ব্লকের ৫০টি করে স্কুলকে পর্যায়ক্রমে ওই প্রকল্পের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি চালু হলে বৃষ্টির জলের আবার ব্যবহারের যেমন বাড়তি সুযোগ তৈরি হবে, তেমনই সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলিতে বিদ্যুৎ বিলের বোঝা সামান্য কিছুটা হলেও কমানোর সম্ভাবনা থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বলেন, “জেলায় গড়ে মাস ছয়েক বৃষ্টি হয়। আবার বহু স্কুলেই জলের সমস্যাও রয়েছে। ফলে ওই সময়টা বৃষ্টির জল ধরে রেখে সহজেই ব্যবহার করা যেতে পারে। সবকিছু ভেবেই পরীক্ষামূলকভাবে দশটি স্কুলের জন্য প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা সফল হলে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ব্লকে আরও বেশি সংখ্যক স্কুলেও এমন উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ‘জল ধরো জল ভরো’-সহ বিভিন্ন প্রকল্পে কয়েকবছর আগে থেকেই জল সংরক্ষণের ওপর বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কোচবিহারেও ভূগর্ভস্থ জলের অপচয় বন্ধের ব্যাপারে নানা প্রকল্প রয়েছে। একশো দিনের কাজ প্রকল্পে বৃষ্টির জল ধরে রাখতে পুকুর সংস্কার, খনন হয়েছে। সেচ দফতরের মাধ্যমেও বেশ কিছু কাজ হয়। কিন্তু স্কুলে স্কুলে বৃষ্টির জল ধরে রেখে পুনর্ব্যবহারের এমন উদ্যোগ এ বারই প্রথম। পরীক্ষামূলকভাবে যে দশটি স্কুলে ওই প্রকল্পের কাজ হবে তার মধ্যে দিনহাটার ওকরাবাড়ি আলাবক্স হাইস্কুল ছাড়াও কোচবিহার সদরের মনীন্দ্রনাথ হাইস্কুল, হরেন্দ্রনাথ হাইস্কুল, পাতলাখাওয়া হাইস্কুল, পুন্ডিবাড়ি হাইস্কুল, ঘুঘুমারি হাইস্কুল, ধূমপুর হাইস্কুল, দেওয়ানহাট হাইস্কুল, তল্লিগুড়ি হাইস্কুল ও শ্যুটিং ক্যাম্প হাইস্কুলের নাম রয়েছে। কোচবিহার জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য, কারিগরি ও পরিবেশ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ শুচিস্মিতা দেবশর্মা বলেন, “ভূগর্ভস্থ জলের অপচয় বন্ধ করা খুবই প্রয়োজন। ওই ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানোর ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টির জল ধরে রেখে স্কুল পড়ুয়াদের শৌচাগার সাফাইয়ের কাজে লাগানোর পরিকল্পনা ওই ভাবনারই একটি অংশ। তাছাড়া এতে সামান্য হলেও বিদ্যুৎ বিলের খরচ কম হবে। প্রকল্পটি চালু হলে দ্রুত জেলায় সাড়া ফেলবে বলে আশা করছি।”
প্রশাসন সূত্রেই জানা গিয়েছে, বৃষ্টির জল ধরে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে শৌচাগার সাফাইয়ের কাজে লাগানোর পরিকল্পনার তালিকাভুক্ত স্কুলগুলির ছাদে ভবন রয়েছে। বৃষ্টির সময় ছাদে যে জল পড়বে তা একটি নির্দিষ্ট পাইপের মাধ্যমে নীচে নামানো হবে। ওই জলই মাটি থেকে প্রায় সাত ফুট উচ্চতায় তৈরি ট্যাঙ্কে জমা রাখা হবে। ওই জলই নির্দিষ্ট পাইপলাইনের মাধ্যমে পড়ুয়াদের শৌচাগারের সরবরাহ করা হবে। ফলে ইচ্ছে করে বা ঝড়বৃষ্টির মরসুমে লোডশেডিং হলে বিদ্যুৎ চালিত মোটর দিয়ে জল না তোলা হলেও শৌচাগারে জল সমস্যা হবে না। ওকরাবাড়ি আলাবক্স হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক বিশ্বনাথ দেব বলেন, ‘‘লোডশেডিং হলেও এতে বৃষ্টির সময় শৌচাগার সাফাইয়ের সমস্যা হবে না। এমন কয়েকটি প্রকল্প হলে বিদ্যুতের খরচও কমবে।” প্রশাসনের এক কর্তা জানিয়েছেন, পড়ুয়ার সংখ্যার চাপ বুঝে প্রকল্পের ট্যাঙ্কের জলধারণ ক্ষমতা তৈরি করা হবে। তা ৫০০-২০০০ লিটার পর্যন্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।