কথা: স্কুলে আসার কথা বলতে সহপাঠীদের সঙ্গে ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে বোঝাচ্ছেন শিক্ষক দিব্যেন্দু বিশ্বাস। মঙ্গলবার চাকুলিয়ায়। নিজস্ব চিত্র।
স্কুলছুট সহপাঠীদের ফেরাতে এ বার পথে নামল পড়ুয়ারাই। মঙ্গলবার উত্তর দিনাজপুরের চাকুলিয়ার রামকৃষ্ণপুর পিডিজিএম হাইস্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাস শেষে কয়েকটি গ্রাম ঘুরে এই আবেদন জানায়। পড়ুয়াদের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন গোয়ালপোখরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী গোলাম রব্বানিও। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘স্কুলছুটদের স্কুলমুখী করতে সহপাঠীদের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।’’
করোনা সংক্রমণের জেরে প্রায় দু’বছর বন্ধ থাকার পর চারটি শ্রেণির জন্য স্কুল খুলেছে। কিন্ত শুরু থেকেই জেলার বেশ কিছু স্কুলে উপস্থিতির হার খুব কম। স্কুল খোলার সপ্তম দিন, মঙ্গলবার পড়ুয়াদের গরহাজিরা নিয়ে চিন্তা কাটেনি শিক্ষকদেরও। সেই তালিকায় রয়েছে রামকৃষ্ণপুর পিডিজিএম হাই স্কুলও। ওই স্কুল সূত্রে খবর, মঙ্গলবার নবম ও দশম শ্রেণি মিলে মোট ৩৫০ পড়ুয়ার মধ্যে মাত্র ৮০ জন উপস্থিত ছিল। স্কুলছুটদের ফেরাতে এ দিন শিক্ষককে সঙ্গে নিয়ে সহপাঠীরাই হাজির হয় বন্ধুদের দুয়ারে দুয়ারে।
করোনার জেরে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় পড়ুয়াদের একাংশ ধান কাটার কাজে লেগে পড়েছে। কেউ আবার রাজমিস্ত্রীর জোগাড়ে, কেউ ভিন্ রাজ্যে কাজে চলে গিয়েছে। বেশ কিছু নাবালিকার বিয়েও হয়ে গিয়েছে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিকি দত্ত বলেন, ‘‘যারা কাজ করছে, আসছে না তাদের স্কুলে ফেরাতেই সহপাঠীদের এমন উদ্যোগ নিয়েছে।’’
মঙ্গলবার একাদশ শ্রেণির ছাত্রী মৌমিতা দাস, সুচিত্রা মণ্ডল, আরসি নাজরা রামকৃষ্ণপুর গ্রামে সহপাঠী, নবম শ্রেণির ছাত্র সৌমেন মণ্ডলকে দেখতে পেয়ে ঘিরে ধরে। সঙ্গে ছিলেন শিক্ষক দিব্যেন্দু বিশ্বাসও। স্কুলের দিদিরা প্রশ্ন করতেই মাথা নিচু করে সৌমেন জানায়, তার বাবা বাইরে কাজ করতেন। কিন্তু লকডাউনে কাজ চলে যায়। সংসার চলছিল না। তাই বাবার সঙ্গে খেতে ধান কাটার কাজে যেতে হচ্ছে তাকে। এ দিন অবশ্য বোঝানোর পরে স্কুল ফিরবে বলে জানায় সৌমেনরা।
দিন শেষে বাড়ি বাড়ি ঘুরেও ক্লান্ত দেখায় না সূচিত্রাদের। বরং বন্ধুরা স্কুলে ফিরবে বলে খুশিতে ঝলমল করে তারা। সূচিত্রা বলে ‘‘অনেক বন্ধুরাই স্কুলে আসছে না। কেন, জানতেই আমরা ওদের বাড়ি গিয়েছিলাম।’’
কেন আসছে না বন্ধুরা?
এ বার মুখ কালো হয়ে যায় ছোট্ট মেয়েগুলোর। বলে, ‘‘না, না, ওদের স্কুলে ফেরাতেই হবে। আমরা তো আছি।’’