জলপাইগুড়়িতে আইন অমান্য। শুক্রবার সন্দীপ পালের তোলা ছবি।
কলকাতায় সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যুর বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবিতে আইন অমান্য কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিচার্জের ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নামলেন উত্তরবঙ্গের ছাত্র যুবরা। শুক্রবার দুপুরে শিলিগুড়়িতে মিছিল শুরু করতেই অবশ্য গ্রেফতার করা হল এসএফআই-ডিওয়াইএফআই কর্মী-সমর্থকদের। শহরের হিলকার্ট রোডে সিপিএমের দলীয় দফতর অনিল বিশ্বাস ভবনের সামনে থেকেই ১৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে অবশ্য তাঁদের থানা থেকে ব্যক্তিগত জামিনে ছাড়়া হয়েছে।
বামেদের যে কর্মী-সমর্থকদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তার মধ্যে ছিলেন পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাম প্রার্থী তথা দার্জিলিং জেলা ডিওয়াইএফআই সম্পাদক শঙ্কর ঘোষ, এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সৌরভ দাসও। মিছিল করতে না দেওয়াতে বাম ছাত্র-যুবরা বিক্ষোভে ফেটে পড়়েন। খবর পেয়ে থানায় যান প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য, সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকাররা। অশোকবাবু বলেন, ‘‘কলকাতায় পুলিশ যা করেছে, তার প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করতে চেয়েছিল ছাত্র-যুবরা। পুলিশ তা করতে দেয়নি। এমনকী মিছিল হওয়ার কথা ছিল হাসমিচক থেকে। সেখানে যেতে দেওয়া হয়নি।’’
কলকাতার রানি রাসমণি রোডে এসএফআইয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের উপরে পুলিশি লাঠিচার্জের প্রতিবাদ করে সারা রাজ্যের সঙ্গে শিলিগুড়়িতেও পথে নামে দার্জিলিং জেলা এসএফআই-ডিওয়াইএফআই। অনিল বিশ্বাস ভবনের সামনে কর্মী-সমর্থকরা জড়়ো হন। সেখান থেকে স্লোগান দিতে দিতে তাঁরা হাসমিচকের দিকে রওনা হতেই তাদের বাধা দেয় পুলিশ। এগোনোর চেষ্টা করতেই তাঁদের গ্রেফতার করা হয়।
বাম ছাত্রমোর্চার পথ অবরোধ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল কোচবিহারে। কোচবিহারের হরিশ পাল চৌপথী এলাকায় ওই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের দাবি, মিছিল করে বাম ছাত্রমোর্চার সমর্থকরা দুপুর ১টা নাগাদ সেখানে পৌঁছন। তিরিশ মিনিটের ঘোষিত রাস্তা অবরোধের শুরু হতেই এলাকায় যানজট তৈরি হয়। মানুষের ভোগান্তি এড়াতে আন্দোলনকারীদের অবরোধ তুলে নিতে বলা হয়। তাতে বামমোর্চার নেতারা রাজি হননি। তা নিয়ে বাদানুবাদ শুরু হয়। আন্দোলনকারীরা মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী লেখা কুশপুতুল পোড়ানোর চেষ্টা শুরু করলে উত্তেজনা চরমে পৌঁছয়। পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের তুমুল বাদানুবাদ শুরু হয়।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে অবরোধ সরানোর চেষ্টা করে। এমনকী মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশমন্ত্রী লেখা কুশপুতুলটিও পোড়ানোর আগেই সরিয়ে দেয়। এসএফআইয়ের কোচবিহার জেলা সম্পাদক দেবজ্যোতি গোস্বামী বলেন, “লাঠি নিয়ে তেড়ে এসেছিল পুলিশ। তবু পুলিশ ঘোষিত আন্দোলন দমাতে পারেনি। আমরা পুলিশের ওই ভূমিকার নিন্দা করছি।” কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, ‘‘মানুষের দুর্ভোগ এড়াতে শুধু রাস্তা অবরোধ তোলার জন্য বলা হয়। অন্য কোনও ঘটনা হয়নি।’’
কলকাতায় ছাত্রদের উপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে ইসলামপুরেও জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় এসএফআই ও ডিওয়াই এফআই-এর সদস্যরা। ইসলামপুরের বাসস্ট্যান্ড এলাকা ও চাকুলিয়ার কানকি এলাকাতে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ হয়। প্রায় পনেরো মিনিট অবরোধ চলে। জাতীয় সড়়কে যানজট হয়। জেলার হেমতাবাদ এলাকার রায়গঞ্জ-বালুরঘাট ১০(এ) নম্বর রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাল এসএফআই। সংগঠনের সদস্যরা দুপুর ২ টা থেকে প্রায় আধঘন্টা পথ অবরোধ করেন। পরে পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ ওঠে। বিকালে সিপিএমের শতাধিক কর্মী সমর্থক রায়গঞ্জের বিবিডি মোড় থেকে হাসপাতাল রোড পর্যন্ত ধিক্কার মিছিল করেন।