নগদের সমস্যার কথা বলে চা বাগান ছেড়ে চলে গিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। তাই শুক্রবার সকালে নকশালবাড়ি ব্লকের ত্রিহানা চা বাগানে বন্ধ হল কাজ।
বাগান কর্তৃপক্ষের বিজ্ঞপ্তিতে লেখা রয়েছে, নোট বাতিলের জেরে বাগানের সমস্যা বেড়েছে। যেমন, শ্রমিকদের মজুরি দিতে সমস্যা হচ্ছে। তা নিয়ে কাজ বাদ দিয়ে আন্দোলন করছেন শ্রমিকরা। চা পাতার গাড়ি আটকে দেওয়ায় বিক্রির টাকাও আসছে না। লাগাতার অসন্তোষের জেরে বাগান বন্ধ করতে হয়েছে বলে তাঁরা জানিয়েছেন।
ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দার্জিলিঙের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব। তিনি বলেন, ‘‘এক দফায় জেলা প্রশাসনের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকার ব্যবস্থা করা হয়। যতদূর জানি আরেক দফার মজুরিও দেওয়া হয়েছে। টাকা না মেলার বিষয়টি পরিষ্কার নয়। খোঁজ নিচ্ছি।’’
বাগান সূত্রের খবর, বর্তমান পরিস্থিতিতে তরাই-র প্রতিটি বাগানে দু’সপ্তাহের বেতন একবারে দিলেও ত্রিহানায় গত নভেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত শ্রমিকদের মাত্র দু’সপ্তাহের বেতন দেওয়া হয়েছে। বাকি সপ্তাহের বেতন নিয়ে শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করতেই সময়মত টাকার ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না বলে বাগান কর্তৃপক্ষ দাবি করেন। তাঁরা ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন।
বাগান সূত্রের খবর, বেংডুবির একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের শাখায় বাগানের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। গত ২৫ নভেম্বর ১০ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা এবং ২ ডিসেম্বর ৭ লক্ষ ১১ হাজার টাকা তুলে বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের মজুরি দিয়েছেন। ওই ব্যাঙ্কের ম্যানেজার দীপ্তি অধিকারি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, বাগান কর্তৃপক্ষ ২ ডিসেম্বরের পর আর নতুন করে টাকার প্রয়োজনের কথা জানাননি। তার আগে চাহিদা মত টাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে ব্যাঙ্কের জন্যই সমস্যার কথা বলা নিয়ে প্রশাসনিক মহলে কথা শুরু হয়েছে।
এ দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাগানের ম্যানেজার অম্লানকুসুম গড়াই ফোন ধরেননি। বাগানটি টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার (টাই) সদস্য। সংগঠনের তরাই ব্রাঞ্চের সচিব সুমিত ঘোষ বলেন, ‘‘বাগান কর্তৃপক্ষ শুধুমাত্র নোটিসের কপি পাঠিয়েছে। ব্যাঙ্ক থেকে টাকা না মেলার বিষয়টি দেখতে হবে। বিষয়টি স্পষ্ট নয়।’’
প্রায় ১০০ বছরের পুরনো এই বাগানটি প্রায় ১২৫০ একরের। বছরে ৭ লক্ষ কেজি পাতা উৎপাদন হয় এখানে। স্থায়ী, অস্থায়ী মিলিয়ে ২৫০০ শ্রমিক রয়েছে। শ্রমিকদের একাংশের দাবি, ব্যাঙ্কের সঙ্গে লেনদেন নিয়ে কর্তৃপক্ষের সমস্যার কথা শোনা যাচ্ছে। শ্রমিকদের কয়েকজনের দাবি, ব্যাঙ্কের সঙ্গে লেনদেনে সমস্যার জেরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কি না সেটাও দেখা হোক। এ দিন সকাল থেকে বাগানে সিটু, আইএনটিটিইউসি সদস্যরা একযোগে আন্দোলন করে। সিটু নেতা গৌতম ঘোষের অভিযোগ, ‘‘টাকা না পাওয়াটা অজুহাত। আমাদের মনে হচ্ছে, টাকা তুলে কর্তৃপক্ষ বসে পড়েছেন।’’ আবার আইএনটিটিইউসি-র নির্জল দে বলেন, ‘‘মিথ্যা অভিযোগ করে বাগানটি বন্ধ করা হয়েছে। সবাই টাকা পাচ্ছে, সেখানে এই বাগান কেন পেল না, এটাই তো খতিয়ে দেখা দরকার।’’