খুচরো-সমস্যার জেরে এ বার লাভের গুড় পিঁপড়েয় খাওয়ার উপক্রম! এমন অভিযোগ করছেন কোচবিহারের ছোট ব্যবসায়ী থেকে সংবাদপত্র বিক্রেতা, হকাররা।
ব্যবসা চালানো নিয়েও উদ্বেগে তাঁরা। তুফানগঞ্জের প্রত্যন্ত ধলপলের বাসিন্দা সংবাদপত্র বিক্রেতা বিনয় সাহা বলেন, “খবরের কাগজ বেচে সংসার চালাই। ক্রেতারা বেশিরভাগই খুচরো দিলেও এজেন্টরা তা জমা নিতে আপত্তি করছেন। বাধ্য হয়েই একশো টাকার খুচরোর বদলে ৫টাকা অতিরিক্ত দিয়ে নোট জোগাড় করছি।”
বিনয়বাবু একা নন, খুচরোর জেরে এমন বিপাকে কোচবিহারের অন্য সব এলাকার হকারদের অনেকেই। দিনহাটা থেকে মেখলিগঞ্জ, জামালদহ থেকে বক্সিরহাট— এক ছবি। কোচবিহারের এক হকার বিশ্বজিৎ পাল বলেন, “গ্রাহকেরা প্রায় সবাই খুচরো দিচ্ছেন। সেসব ঘরেই জমাতে হচ্ছে। আমার ব্যবসার নিজের বকেয়া রাখতে হচ্ছে। এ ভাবে কতদিন ব্যবসা চালাত পারব সেটাই চিন্তার বিষয়।”
বিপাকে এজেন্টরাও। তাঁদের অভিযোগ, ব্যাঙ্কে খুচরো জমা দিতে না পারায় তাঁরাও সমস্যায় পড়ছেন। সংবাদপত্রের কোম্পানিগুলিকে বিল মেটানোই চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তুফানগঞ্জের এক সংবাদপত্র এজেন্ট চৈতন্য সাহা বলেন, “যতদিন পেরেছি হকাররা যতটা দিয়েছে ততটা খুচরোই নিয়েছি। কিন্তু এখন ব্যাঙ্ক যদি জমা না নেয় তাহলে আমরাই বা কী করব! ঘরে খুচরো জমলেও বকেয়া মেটাতে পারছি না।”
কোচবিহারের সংবাদপত্রের এজেন্ট সুজিত পাল বলেন, “কোনও ব্যাঙ্কেই খুচরো জমা নিতে চাইছেনা। কিন্তু ক্রেতারা তো দিচ্ছেন। আপত্তি করলে বলছেন কাগজের দামের তো আর নোট হয় না।” বাণেশ্বরের সংবাদপত্র এজেন্ট সুজন রায়ের ক্ষোভ, “১০ টাকার কয়েন পর্যন্ত একটি ব্যাঙ্ক জমা নিচ্ছে না।”ব্যবসায়ীদের এই ক্ষোভ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনীতিও। কোচবিহারের তৃণমূল সাংসদ পার্থপ্রতিম রায় এই অবস্থার জন্য বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারকেই দুষেছেন। তিনি বলেন, “নোট বাতিলের পর বাজারে মাত্রাতিরিক্ত খুচরো ছেড়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানির মধ্যে ফেলা হয়েছে। সবটাই কেন্দ্রের ধণিক শ্রেণীর স্বার্থ সুরক্ষার চেষ্টার জের।” বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি নিখিলরঞ্জন দে অবশ্য দাবি করেন, ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন। তাঁর কথায়, ‘‘নোট বাতিলের জেরে ঘরে মা বোনদের জমানো খুচরো বাজারে এসেছে। তাই খুচরো বেড়েছে। কোনও ব্যাঙ্ক সত্যি খুচরো জমা না নিলে তা নিয়ে অভিযোগ জানাব।”