প্রতীকী চিত্র।
প্রশ্নটা ভেসে এল আচমকাই। ‘‘তবে কি আমি এত দিন দেশের নাগরিক ছিলাম না?’’ জলপাইগুড়ির মার্চেন্ট রোডের এক দোকানির মুখে প্রশ্নটি শুনে খানিকটা থমকে গেলেন বিজেপির জেলা সম্পাদক তপন রায়। তার পরে বললেন, “তা হবে কেন! সকলেই তো নাগরিক। ২০১৪ সালের আগে থেকে এ দেশে বসবাস করছেন এমন লিখে দিলেই হবে।” এ বার দোকানির পাল্টা প্রশ্ন, “এত দিন যে ভোট দিলাম সে কী কিছু নয়? আবার লিখে দিতে হবে কেন?”
সংশোধিত নাগরিক আইন নিয়ে বাসিন্দাদের বোঝাতে জলপাইগুড়ির রাস্তায় নেমে এমনই নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হল বিজেপি নেতা-কর্মীদের। প্রশ্নের জবাবও দিলেন বিজেপি কর্মীরা। বিলি করলেন লিফলেটও।
শুক্রবার জেলা বিজেপি কার্যালয় থেকে দলের পতাকা, লিফলেট নিয়ে দলটি ডিবিসি রোড, টেম্পল স্ট্রিট ঘুরে মার্চেন্ট রোডে আসে। রাস্তার দু’পাশের ব্যবসায়ী থেকে পথচারী সকলের হাতে লিফলেট দিয়ে সিএএ নিয়ে নিজেদের বক্তব্য জানায় বিজেপি। প্রথম প্রশ্ন আসে মার্চেন্ট রোডের শাঁখা-পলা-গয়নার দোকানের মালিকের থেকে। ব্যবসায়ী অভিষেক ঘোষের প্রশ্নের মুখে পড়েন জেলা সম্পাদক তপন রায়। বেশ কিছু ক্ষণ দু’জনের প্রশ্নোত্তর চলে। তারপরে বিজেপির জেলা যুব সভাপতি শ্যামপ্রসাদ এসে বলেন, “এই আইন কারও থেকে কিছু নেবে না। সকলকে নাগরিকত্ব দেবে। উদ্বাস্তুরা এত দিন নাগরিকত্ব পায়নি। বিজেপি সরকার সকলকে নাগরিকত্ব দেবে।” কিন্তু কে উদ্বাস্তু কে নন, সে প্রশ্ন তুলেছেন শহরের বাসিন্দারা। যেমন অভিষেকবাবুর মুখ দেখে বোঝা গেল না, তিনি বিজেপি নেতার জবাবে সন্তুষ্ট হয়েছেন কি না। বিজেপি কর্মীরা ফিরে যাওয়ার পরে তিনি বলেন, “এতদিন দেশে থাকার পরে এখন নাগরিকত্ব দেবে মানে কী? তার মানে আমাদের নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে? কে জানে!”
বিজেপি নেতারাও মানছেন প্রচুর প্রশ্ন এসেছে। শ্যাম বলেন, “অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, জানতে চেয়েছেন। আমরা বুঝিয়ে বলার পরে সকলের ভুল ভেঙেছে। বিরোধীরা যে অপপ্রচার করছে সে কথা সকলে বুঝতে পেরেছেন। আমাদের থেকে চেয়েচেয়ে লিফলেট নিয়ে গিয়েছেন পথচারীরা।”
জেলা বিজেপির দাবি, বাসিন্দাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন আইন সম্পর্কে বোঝানো হচ্ছে। জেলা বিজেপি নেতাদের একাংশ অবশ্য মেনে নিচ্ছেন, অনেক ক্ষেত্রেই বোঝানো কষ্টকর হয়ে গিয়েছে। বিজেপি সূত্রের খবর, প্রতি বুথে অন্তত পাঁচজন করে বেছে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যাতে তাঁরা বাসিন্দাদের প্রশ্নের উত্তরে থতমত না খেয়ে নিজেদের কথা বলতে পারেন।