জেলায় ফিরছেন বিপ্লব মিত্র। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামিকাল, সোমবার দিল্লি থেকে বাগডোগরায় নামবেন তিনি। সেখান থেকে জেলা পরিষদের সদস্যদের নিয়ে জেলায় আসার কথা সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া বিপ্লবের। তাঁকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছেন। অন্যদিকে, জেলায় ফেরার পর বিপ্লবের কাজকর্মে নজর রেখে দলরক্ষার নীল নকশাও ভাবতে শুরু করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অর্পিতা ঘোষ।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বিপ্লব-ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, ‘‘সোমবার দাদা ফিরবেন। ওঁর নিরাপত্তার বিষয়টি সোমবারের মধ্যেই অনুমোদিত হয়ে গেলেই তিনি ফিরবেন। আমরা তাঁকে আনতে জেলা থেকে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বাগডোগরা যাব।’’ সূত্রের খবর, বিপ্লব এবং তাঁর অনুগামী তথা জেলা পরিষদের দলত্যাগী সদস্য ও সভাধিপতি এখনও দিল্লিতেই রয়েছেন। সভাধিপতি ও বিপ্লবকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার নিরাপত্তা দেবে বলে খবর। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে সেই নিরাপত্তার বিষয়টি অনুমোদন করতে কিছুটা সময় প্রয়োজন হয়, তাই তাঁরা দিল্লিতেই রয়ে গিয়েছেন। বিপ্লবকে ‘ওয়াই প্লাস’ ও সভাধিপতি লিপিকা রায়কে ‘ওয়াই’ ক্যাটেগরির নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে বলে খবর। বিপ্লব-ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, বিপ্লব বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই তাঁকে দেওয়া রাজ্যের নিরাপত্তা তুলে নিয়েছে রাজ্য সরকার।
জেলার রাজনৈতিক কারবারিদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা ছাড়া জেলায় ফেরা বিপ্লবের পক্ষে নিরাপদ নয়। তাই দিল্লি থেকে আটঘাট বেঁধেই তিনি আসছেন। নিজের নিরাপত্তার পাশাপাশি যেসব সদস্য এবং জনপ্রতিনিধিদের তিনি তৃণমূল থেকে বিজেপিতে সামিল করবেন তাঁদেরও উপযুক্ত নিরাপত্তা না দিলে অনেকেই বিজেপিতে যোগ দেবেন না বলে খবর। তাই কেন্দ্রের বিজেপি নেতৃত্বের থেকে প্রয়োজনীয় বরাভয় পেয়েই তিনি দিল্লি থেকে ফিরছেন।
এদিকে, বিপ্লবকে স্বাগত জানাতে প্রায় ৩০টি গাড়ি নিয়ে বাগডোগরা যাচ্ছে। সেখান থেকে কার্যত অনুগামীদের সঙ্গেই তিনি জেলায় ফিরবেন বলে জানা গিয়েছে। যদিও এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে ফোন করা হলেও বিপ্লব ফোন ধরেননি। অন্যদিকে, বিপ্লব জেলায় ফিরলে তাঁর অনুগামীরা যাতে বিপ্লবের সঙ্গে বিজেপিতে যোগ না দেন, তা নিশ্চিত করতে অর্পিতা প্রতিনিয়ত জেলার নেতা, জনপ্রতিনিধিদের উপরে তীক্ষ্ণ নজর রাখছেন। প্রতিনিয়ত তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিপ্লবের থাবা থেকে দূরে রাখার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এমনকি, যে ১০ জন জেলা পরিষদের সদস্য দলবদল করেছেন, গোপনে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দলে ফেরানোর পরিকল্পনাও নিয়েছেন অর্পিতা। অর্পিতা এদিনও বলেছেন, ‘‘১০ জনের মধ্যে কয়েকজন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তাঁরা জেলায় ফিরলেই আবার দলে ফিরে আসবে।’’
দলের জনপ্রতিনিধিদের ধরে রাখার পাশাপাশি শাসকদল পঞ্চায়েত আইন ঘেঁটে বিজেপিতে যাওয়া সদস্যদের সদস্যপদ খারিজের আবদেন করতে প্রস্তুতিও নিচ্ছে। ইতিমধ্যেই পঞ্চায়েত আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে শাসকদল এ নিয়ে বিস্তারিত পরামর্শও নিচ্ছে। আইনের ফাঁক গলে যাতে কোনওভাবেই জেলা পরিষদ বিজেপির দখলে না যায় সেজন্য কার্যত আদাজল খেয়ে নেমে পড়েছেন শাসক শিবির।