কালিম্পঙে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে গুরুঙ্গ। —নিজস্ব চিত্র।
ডুয়ার্সে তাঁর জনপ্রিয়তায় যে ভাটা পড়েছে, তা সম্প্রতি জয়গাঁ-বীরপাড়ায় সভা করতে গিয়ে বুঝেছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। কোনও সভাতেই তেমন ভিড় দেখা যায়নি। এ বার টের পেলেন, নিজের খাসতালুক দার্জিলিং পাহাড়েও দলের রাশ ক্রমশ আলগা হয়ে যাচ্ছে। দলের অনেকে যে তাঁর নির্দেশের তোয়াক্কা না করে যথেচ্ছ তোলা আদায় করছে, তা জনসমক্ষে স্বীকার করে নিলেন মোর্চা সভাপতি তথা গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) চিফ গুরুঙ্গ। বৃহস্পতিবার কালিম্পঙে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তোলা আদায়ের অভিযোগ শোনার পরে তিনি বলেছেন, জোর করে তোলা আদায় করলে দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে সদস্যদের।
ব্যবসায়ীদের গুরুঙ্গ বলেন, “দলের নামে জুলুমবাজি বরদাস্ত করা হবে না। প্রয়োজনে অভিযুক্তদের দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।” পুলিশকে জানিয়ে আইনি পদক্ষেপ করার আশ্বাসও দেন তিনি।
সম্প্রতি কালিম্পং, কার্শিয়াং ও দার্জিলিং শহর ও সংলগ্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের একাংশ তোলাবাজদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে কালিম্পঙের একজন প্রভাবশালী মোর্চা নেতার কাছে যান। তিনি বিমল গুরুঙ্গের কাছে বিষয়টি জানান। এর পরেই বৃহস্পতিবার গুরুঙ্গ কালিম্পঙে গিয়ে ব্যবসায়ীদের ডেকে পাঠান। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরাও সেখানে যান। কালিম্পং চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক নরেন্দ্র সোমানির নেতৃত্বে ব্যবসায়ীরা বিশদে পরিস্থিতি জানান। ওই সংগঠনের এক কর্তার দাবি, কথা শুনতে শুনতে গুরুঙ্গ কখনও হতাশ, কখনও ক্ষিপ্ত হয়ে যান। শেষ পর্যন্ত অবশ্য দলের একাংশ যে কথা শুনছে না সেটা প্রকাশ্যে স্বীকার করে কড়া পদক্ষেপের আশ্বাস দেন।
তাতে ব্যবসায়ী-বাসিন্দাদের দুশ্চিন্তা কাটেনি। কারণ, গত সপ্তাহে বিমল গুরুঙ্গ ডুয়ার্সে গিয়েছিলেন জনসভা করতে। সেখানে প্রথম দিন জায়গাঁয় দিনভর চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসে থাকলেও লোক ছিল হাতে গোনা। পর দিন বীরপাড়ায় জনসভা হবে বলে ঘোষণা করেন মোর্চা নেতৃত্ব। সেখানেও লোক না হওয়ায় কর্মিসভায় করে দায় সারেন তাঁরা। এখন পাহাড়েও গুরুঙ্গের নির্দেশকে কতজন আগের মতো পাত্তা দেবেন তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন ভুক্তভোগীদের অনেকেই।
অন্য দিকে, জিটিএ গঠনের পরেও পাহাড়ের উন্নয়নে গতি আসেনি। কর্মসংস্থানও সে ভাবে হয়নি। বরং রাস্তাঘাট-সহ নানা নির্মাণের ঠিকাদারি মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে চলে যায়। দলের মহকুমা স্তরের নেতাদের একাংশ শাখা অফিসে গিয়ে তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশও করেন। অনেকে বীতশ্রদ্ধ হয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। সব মিলিয়ে দলের মধ্যেও গুরুঙ্গের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা অবশ্য জানান, দিল্লিতে যন্তর-মন্তরে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে যে অবস্থান চলছে, তা শেষ হলে দার্জিলিঙে ফিরে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক করে দলের যাবতীয় বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবেন গুরুঙ্গ।