এক সময় ‘সিংহ’-এর গর্জন থামিয়ে দিয়েছিল ‘হাত’। সৌজন্য প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি। ফের সেই হাত আবার ঘাসফুলের দাপটে ক্ষয়ের পথে। উত্তর দিনাজপুর জেলার গোয়ালপোখর এবং চাকুলিয়া, করনদিঘিতে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের ২৬ আসনের মধ্যে অর্ধেক আসন দখল করেছিল কংগ্রেস। লটারির মাধ্যমে বাম দখল করলে পরে বিরোধীদের ভাঙিয়ে তৃণমুল কংগ্রেস বোর্ড দখল করে। তাই ভোটের মুখে ফের প্রাসঙ্গিক ‘প্রিয়দা’। তিনি না থেকেও আছেন। ডান কি বাম সবার মুখে প্রিয়দা।
গোয়ালপোখর এর কংগ্রেস দাপুটে নেতা আফজল হোসেন জানালেন, প্রিয়দার অনুপস্থিতি হারে হারে টের পাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘সংগঠন কী ভাবে করতে হয়! মানুষের বিপদে আপদে কী ভাবে থাকতে হয় সেটা শিখিয়েছেন প্রিয়দা। আমরা খুব মিস করছি।’’
এক সময় গোয়ালপোখর ছিল ফরয়ার্ড ব্লক দলের দুর্গ। প্রয়াত রমজান আলির দুর্গ বলা হত। ২০০৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে প্রয়াত রমজান আলির ভাই হাফিজ আলম সাইরানী কে হারিয়ে প্রিয়-জায়া দীপা দাশমুন্সি জয়ী হন। প্রিয়বাবু অসুস্থ হওয়ার ফলে ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটে রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে প্রিয়-জায়া সাংসদ হন।
গোয়ালপোখর বিধানসভা ভাগ হয়ে চাকুলিয়া এবং গোয়ালপোখর বিধানসভা হয়। চাকুলিয়া কেন্দ্রে প্রয়াত রমজান আলির ছেলে ইমরান আলী রমজ জয়ী হন ফরোয়ার্ড ব্লক দল থেকে। আর গোয়ালপোখর থেকে জয়ী হন কংগ্রেস থেকে গোলাম রব্বানি। পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। ‘প্রিয়দা’র কাছে হাতেখড়ি রাজনীতিতে গোলাম রব্বানির। তিনি বলেন, ‘‘তাঁর কাছ থেকে রাজনীতি শেখা। খুব মিস করছি প্রিয়দাকে।’’
প্রিয়দা যে একজন দক্ষ সাংগঠনিক ব্যক্তি ছিলেন তা অকপটে স্বীকার করেন ফরয়ার্ড ব্লক নেতা সফিউর রহমানও। তিনি বলেন, ‘‘প্রিয়দা অত্যন্ত বামপন্থী স্টাইলে সংগঠন করতেন। ভোট আসলে তাঁর কথা খুব মনে পড়ে।’’ জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রায়গঞ্জ বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘প্রিয়দার অনুপস্থিতি আমরা বুঝতে পারছি। তিনি আজ নেই। তিনি থাকাকালীন জেলার যা উন্নয়ন করেছেন। আজ তিনি বেঁচে থাকলে জেলার রূপরেখা বদলে যেত। আমরা পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রিয়দা’র আদর্শের কথা তুলে ধরব। তিনি যে জেলার স্বপ্ন দেখছেন সেই অধরা স্বপ্ন পূরণ করতে কংগ্রেসকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাব।’’
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে চাকুলিয়া তিনটি জেলা পরিষদ আসনে এবং গোয়ালপোখর ২টি আসনে কংগ্রেস প্রার্থী জয়ী হন। এ বারের নির্বাচনে কংগ্রেস অনেকটাই ক্ষয়িষ্ণু পথে। নেই নেতা কর্মী। বেশিরভাগ নেতা কর্মী শাসক দলে ঢুকে পড়েছেন। বামেদের ভরসা করেছিলেন অনেকে, তবে সে আশা পূরণ হয়নি। তাঁরা পৃথকভাবে প্রার্থী দিয়েছেন। কংগ্রেস এবং বাম নেতৃত্বের দাবি, আলোচনার মাধ্যমে কিছু আসনে মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হবে।
তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রচারে থাকবেন দীপা। তিনি এলাকায় একটানা কর্মসূচি নেবেন। কর্মিসভা থেকে শুরু ছোট বড় সভা করবেন বলে জেলা কংগ্রেস সূত্রে জানানো হয়েছে।