কেউ ভয়ে গ্রাম ছাড়ছেন। কেউ আবার ভয়ে প্রার্থী পদই প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। কোচবিহারে রাজ্যের শাসক দল বিরোধী প্রার্থীদের এখন এমনই অবস্থা।
বিশেষ করে বিজেপি প্রার্থীদের উপরে টানা হামলার অভিযোগ উঠেছে। বিজেপির দাবি, শাসক দলের হামলার মুখে পড়ে ইতিমধ্যেই ৭০ জন প্রার্থী বাড়ি ছেড়ে দলীয় অফিসে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে আবার আত্মীয়ের বাড়িতে চলে গিয়েছেন। মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ১৫ জন প্রার্থী। বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “প্রতিদিন বাড়িতে বাড়িতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। যারা বাড়ি ছেড়েছেন তাঁদের আত্মীয়দের উপরেও হামলা হচ্ছে।” বামেরা জানিয়েছেন, তাঁদের প্রার্থীরাও আতঙ্কে ভুগছেন।
তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য সেই অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “বিরোধীরা প্রার্থী খুঁজে পায়নি। তাই সব আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি। কাউকে হয়তো নানা ভাবে প্রলোভন দেখিয়ে প্রার্থী করেছিল। পরে সব বুঝতে পেরে তিনি প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন।” কোচবিহারের জেলা পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে দাবি করেন, তাঁরা যে সব ক্ষেত্রে অভিযোগ পাচ্ছেন সেখানে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। বিরোধীরা অবশ্য দাবি করেছে, পুলিশ শাসক দলের হয়ে কাজ করছে।
মনোনয়ন না তুললে...
হাইকোর্টের নির্দেশে এখন বন্ধ রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাজ। কিন্তু তলে তলে চাপ চলছে রাজনৈতিক ভাবে। বিভিন্ন এলাকায় এই সব হুমকি-হুঁশিয়ারির চেহারা আলাদা। তারই কয়েকটি অভিযোগ তুলে ধরা হল এখানে
• জলপাইগুড়িতে এক পা ভেঙে, আর এক পা ভাঙার হুমকি
• সরকারি চুক্তিভিত্তিক চাকরিও কেড়ে নেওয়ার হুমকি
• সরকারি চাকরিতে বদলি করে দেওয়ার হুমকি আলিপুরদুয়ারে
• সন্ধ্যা হলেই প্রার্থীর বাড়িতে ঘণ্টায় ঘণ্টায় ঢিল পড়ছে
• রাতে আনাজ, ধান, এমনকী গবাদি পশু লুঠ কোচবিহারে
• বাড়িতে ডেকে ভরপেট খাইয়ে মনোনয়ন তুলতে জোরাজুরি
• মালদহে মাদক, জাল টাকা পাচারে জড়িয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি
• সব জেলাতেই দেদার অপহরণের হুমকি
বিজেপির দাবি, মাথাভাঙ্গা-২ নম্বর ব্লকের অধিকাংশ আসনে প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। সেই প্রার্থী প্রত্যাহার করাতে পুলিশ দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। দিন কয়েক আগে নিশিগঞ্জ থেকে ৫ জন বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বিজেপির অভিযোগ, একদিকে শাসক দলের আশ্রয়ে থাকা দুষ্কৃতীরা হামলা চালাচ্ছে। অপরদিকে পুলিশ তাঁদের মদত দিচ্ছে। বিজেপির কোচবিহার টাউন ব্লকের সভাপতি বিরাজ বসু বলেন, “প্রতিদিন গ্রাম থেকে বিজেপি প্রার্থী ও কর্মীরা আশ্রয় নিচ্ছেন। পুলিশকে জানালেও নিরাপত্তা নেই।”
পানিশালার বিজেপি প্রার্থী মজিবর রহমান, নাজিরহাটের শম্পারানি ঘোষ, সুশীল ঘোষ, মহিষকুচি থেকে রবি ঘোষরা গ্রাম ছেড়েছেন। শুক্রবার রাতেও দীঘলটারি থেকে সাতটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন পার্টি অফিসেই। জেলা পরিষদের ৪টি, পঞ্চায়েত সমিতির ৭৩টি এবং ৪৬৩টির বেশি পঞ্চায়েত আসনে বিনা জিতেছে তৃণমূল।