পঞ্চায়েত ভোট জমিয়ে দিয়েছে গাজন-চড়কের উৎসবে। চৈত্র সংক্রান্তির বিকেল থেকে গ্রামের মাঠে-মাঠে খুঁটি পুতে কোথাও চড়ক পুজো হয় কোথাও বা বসে গাজনের আসর।
চৈত্র মাসের শুরু থেকে ঢাক নিয়ে গাজনের-চড়কের গান শুনিয়ে, নাচ দেখিয়ে চাঁদা তোলেন উদ্যোক্তারা। চাঁদা বলতে চড়ক কাঠ রেখে ঢাক বাজিয়ে নাচ করা। খুচরো পয়সাই আদায় হয় বেশি। চোদ্দ বছর ধরে চড়কের আয়োজন করা পরিমল ঋষি মন্তব্য, “ওই কোনও রকমে নমো নমো আয়োজন হতো।” এ বার হাসি ফুটেছে গাজনের দলের। গ্রামের নেতা থেকে প্রার্থী সকলেই নাকি দু’হাত উপুড় করে সাহায্য করছেন মেলা আয়োজনে। ভোট বড় বালাই।
মেলা বসে বছরের শেষ দিনে। তার জৌলুস খুব একটা না থাকলেও গ্রাম্য মেলায় ভিড় থাকে বেশি। ভোটের মুখে সে সুযোগ হাতছাড়া করার কথা নয়, জলপাইগুড়ি জেলার নেতা-প্রার্থীরা তা করেনওনি।
ধূপগুড়ির ঝাঝাঙ্গির বাশিলার ডাঙা গ্রামে চড়ক পুজোর আয়োজন করেন পরিমল ঋষি-রা। পাড়ার মাঠে চড়ক গাছ পুতে নানা রকম শারীরিক কসরত দেখানো হতো।
এ বার সেই মাঠে বসবে আলো লাগানো আধুনিক সাউন্ডবক্স। টাঙানো হবে প্যান্ডেল। পরিমলের কথায়, “ভোট বলে কি না, জানি না। তবে আমাদের গ্রামে যারা পঞ্চায়েতে প্রার্থী হয়েছেন তাঁরাও চাঁদা দিচ্ছেন।”
বেরুবাড়ি, ময়নাগুড়ির বিভিন্ন গ্রামের আড্ডায় শোনা যাচ্ছে অমুক গ্রামে তমুক প্রার্থী গাজনের মেলার জন্য ডিজি বক্স কিনে দিয়েছেন, পাহাড়পুরের এক নেতা মেলার শেষে ঢালাও ফ্রায়েড রাইস আর পনিরের তরকারির ভোজ দেবেন। না হলে প্রতি বছর মোটা চালের ভাত আর বাঁধাকপির ঝোলই খাওয়ানো হতো। মোহিতনগরের বাগান মাঠে চড়ক মেলার যাবতীয় আয়োজনের দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন পাশাপাশি দুই গ্রামের দুই তৃণমূল প্রার্থী। শিব-কালী সেজে গ্রামে গ্রামে ঘুরে চাঁদা তুলছেন দুই যুবক। শোনা যাচ্ছে তৃণমূল নেতাই তাঁদের সাজের সব সরঞ্জাম কিনে দিয়েছেন। আবার বেলাকোবা এলাকার এক বিজেপি নেতা এ বার গ্রামে নতুন এক চড়ক পুজোর আয়োজন করিয়েছেন। চাঁদা তোলার প্রয়োজন নেই সব খরচ তাঁরই। পুজোর শেষে খিচুড়ি লাবড়ার ঢালাও পাত পড়বে বলে আশ্বাসও দিয়েছেন।
শহরে এসে গাজনের নাচ দেখানোর সাধ পূরণ হয়েছে বাদল-মহেশদের। বেরুবাড়িতে ফি বছর সংক্রান্তিতে গাজন হয়। তার আগে গ্রামে ঘুরেই চাল-ডাল, টাকা জোগাড় করতেন নাচ-গান করে। এ বছর বড়ো অটো ভাড়া করে জলপাইগুড়ি শহরে আসছেন রোজ। সাত সকালে শহরের বাইরে নেতাজি পাড়ার মাঠে গাড়ি থাকছে। দিনভর শহরে ঘুরছেন। মহেশ বললেন, “আমাদের পাড়ার এক দাদার বড় অটো আছে। ওই দাদাই অটো দিল। কোনও খরচও নিচ্ছেন না। দাদা এ বার ভোটে দাঁড়িয়েছেন।“ তৃণমূল প্রার্থী দাদা অটো দিয়েছেন শুনে বিজেপি প্রার্থী মেলার মাঠে আলো এবং মাইক লাগিয়ে দিয়েছেন, জানালেন মহেশ-বাদল রা।
ভোট কবে হবে, তা নিয়ে এখন হাইকোর্টের রায়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবে অনিশ্চয়তার অবকাশ নেই একটি বিষয়ে। আজকে সংক্রান্তির গাজন-চড়ক যে জমজমাট হবে তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই।