প্রতীকী ছবি
‘চাদর বিছিয়ে দিয়েছি, মেঝেতে শুয়ে পড়ুন!’ নির্দেশ শুনে স্তম্ভিত সদ্য করোনা সংক্রমণ ধরা পড়া রোগী। কোভিড হাসপাতালের আরেকটি শয্যায় ছিলেন এক তৃণমূল নেতাও। তিনি ফোন করেন স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তাকে। স্বাস্থ্য দফতর থেকে তাঁকে জানানো হয়, রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, হাসপাতালে জায়গা কুলোচ্ছে না। এর পরে মেঝেতেও জায়গা মিলবে না— এই আশঙ্কায় নতুন আসা রোগীরা মেঝেতেই শুয়ে পড়েন বলে দাবি। সোমবার রাত এবং মঙ্গলবার দিনে জলপাইগুড়ির কোভিড হাসপাতালে শয্যা সঙ্কট শুরু হয় বলে অভিযোগ। রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় গত সোমবার রাত থেকেই ততপর হয় স্বাস্থ্য দফতর। রানীনগরের খুলে দেওয়া হয় ‘সেফ হোম।’ সেখানে রোগীদের পাঠানো শুরু হয়। রোগীর ভিড় সামলাতে এবার জলপাইগুড়ির শহরের রোগীদের নিজের বাড়িতে রেখেই চিকিতসা করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
জলপাইগুড়ির জেলাশাসক অভিষেক তিওয়ারি বলেন, “জেলার সব ব্লক থেকেই সংক্রমণের রিপোর্ট আসছে। জলপাইগুড়ি শহরেও রোগী বাড়ছে। শহরের ক্ষেত্রে রোগীদের বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা শুরু করার ভাবনাচিন্তা হয়েছে। পুরসভার সঙ্গে কথা হবে। শহরে এ নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সোমবার রাতেই কোভিড হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা একশো ছাড়িয়ে যায়। মেঝেতেও রোগীদের থাকতে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। মেঝেতে রোগীরা শুয়ে রয়েছেন, এমন একটি ছবিও (সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি) মোবাইলে চালাচালি শুরু হয়। করোনা আক্রান্ত এক ব্যক্তি সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, “এখন পর্যাপ্ত বেড না থাকায় লোককে নীচে বসতে হচ্ছে। একটা বেড থেকে আরেকটা বেডের দূরত্ব খুব বেশি হলে দেড় ফুট।” পরে সেই পোস্ট মুছেও দেওয়া হয় হলে দাবি। মঙ্গলবারেও রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এ দিন জলপাইগুড়ি শহরেই দশ জন, ময়নাগুড়িতে অন্তত ৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। রাজগঞ্জ, মালবাজার ব্লক মিলিয়ে ১৫-২০ জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে। এই রোগীদের হয় কোভিড হাসপাতালে, না হলে সেফ হোমে রাখতে হবে। সন্ধ্যায় আরেক দফার রিপোর্ট এলে সব রোগীকে রাখা যাবে তো— এই প্রশ্নই ঘুরছে স্বাস্থ্যকর্তাদের মুখে মুখে।
উত্তরবঙ্গে করোনা মোকাবিলার দায়িত্বে থাকা ওএসডি সুশান্ত রায় বলেন, “জরুরি ভিত্তিতে রানিনগরের সেফ হোম চালু হয়েছে। শিলিগুড়ির পুর এলাকার রোগীরাও সেখানে এসেছেন। কোভিড হাসপাতাল থেকেও রোগীদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে রানিনগরে। টিয়াবনে নতুন সেফ হোমের পরিকাঠামো তৈরিই আছে। জলপাইগুড়িতে নতুন করে ২০০টি এবং শিলিগুড়িতে ৫০০টি শয্যা বাড়ানো হবে।” জলপাইগুড়ির সারি হাসপাতালেও কোভিড রোগীদের রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে। ঢোকা বের হওয়ার পৃথক পথ থাকবে।