আতঙ্কে ফিরছেন শ্রমিকেরা

আফরাজুল খানের হাত ধরেই বছর দশেক আগে রাজস্থানের রাজসমুন্দ জেলার দোয়িন্দা গ্রামে কাজের জন্য গিয়েছিলেন সৈয়দপুর গ্রামের বাসিন্দা হারুণ শেখ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:০৯
Share:

পাদদেশে: আফরাজুলের মৃত্যুর প্রতিবাদে নয়াদিল্লিতে গাঁধী মূর্তির নীচে কংগ্রেসের সাংসদেরা। নিজস্ব চিত্র

আফরাজুল খুন হওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রবাসী শ্রমিকদের ঘরে ফেরার ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ডাক রাজস্থানে পরিযায়ী শ্রমিকদের কানে হয়তো পৌঁছায়নি। তবে, আফরাজুল খান নৃশংসভাবে খুন হওয়ার পর আতঙ্কে রাজস্থানের বিভিন্ন গ্রাম থেকে কাজ ছেড়ে মালদহের বাড়ি ফিরে আসার হিড়িক অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে, আফরাজুলের সৈয়দপুর গ্রামেরই অন্তত একশো যুবক রাজস্থানের বিভিন্ন জায়গা থেকে বাড়ি ফিরে এসেছেন। ফিরে এসেছেন আফরাজুলের মেয়ে জামাই থেকে শুরু করে ভাগ্নেও। আতঙ্কে অনেকে আবার রাজস্থান ছেড়ে কাজের খোঁজে ইতিমধ্যে পাড়ি দিয়েছে দিল্লি, মুম্বই, গোয়া। যাঁরা ফিরে এসেছেন তাঁরা এখন কাজের জন্য ইতিউতি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু কাজ না মেলায় তাঁরা কার্যত হতাশ।

Advertisement

আফরাজুল খানের হাত ধরেই বছর দশেক আগে রাজস্থানের রাজসমুন্দ জেলার দোয়িন্দা গ্রামে কাজের জন্য গিয়েছিলেন সৈয়দপুর গ্রামের বাসিন্দা হারুণ শেখ। সৈয়দপুরের শেখপাড়া গ্রামে বাড়ির দাওয়ায় বসে হারুণ সাহেব বলছিলেন, ‘‘এলাকায় কাজ নেই। সাতজনের সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছিলাম। বন্ধু আফরাজুলের হাত ধরেই রাজস্থানে গিয়েছিলাম কাজের জন্য। ও যে বাড়িতে থাকত তার কয়েকটা বাড়ি পরেরই একটি বাড়িতে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতাম। দিব্যি চলছিল সংসার। কিন্তু বন্ধুর নৃশংস খুন সবকিছু বদলে দিল।’’ তিনি জানান, দোয়িন্দা গ্রামে সৈয়দপুরের যে ক’জন মানুষ ছিলেন, আতঙ্কে কাজে যাওয়া বন্ধ করে দেন। তারপর আর থাকার ঝুঁকিও না নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন।

যে কাকরোলি এলাকায় আফরাজুল খুন হয়েছিলেন সেই কাকরোলিতে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন সৈয়দপুর গ্রামের মীর ডালিম, জুয়েল শেখ, আলিউল শেখ, রশিদুল শেখ, রফিকুল শেখ সহ অনেকেই। তাঁরা সেখানে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবেই কাজ করতেন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করলে মজুরি মিলত সাড়ে তিনশো টাকা। বছর কুড়ির মীর ডালিম বলেন, ‘‘আফরাজুল চাচা খুনের পর আমরা কাকরোলির বাড়ি থেকে বের হতেই ভয় পাচ্ছিলাম। আতঙ্ক একটাই যে আমাদেরও যদি তেমন পরিণতি হয়। বাঁচানোর কেউ নেই। আমরা গ্রামেরই ১৫ জন প্রথমে বাসে ও পরে অজমের শরিফ থেকে ট্রেনে করে সোজা বাড়ি ফিরি।’’ ফিরে আসা শ্রমিক জুয়েল শেখ, গোলাম মুরতুজরা বলেন, ‘‘আমাদের মজুরির টাকা এখনও বকেয়া। কিন্তু জীবন আগে, তাই আমরা রাজস্থান থেকে আতঙ্কে পালিয়ে এসেছি। কিন্তু এখানে কাজ মিলছে না। সঞ্চিত অর্থ থেকেই দিন গুজরান করছি।’’

Advertisement

রবিবারই কাকরোলি থেকে ফিরেছেন সৈয়দপুরের শাহজাহান শেখ, ইসলাম শেখরা। তাঁরা বলেন, ‘‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রী ফিরে আসতে বলেছেন বলে আমাদের জানা নেই। কিন্তু ওই কাণ্ডের পর সেখানেও আর কাজ মিলছে না। ফলে চলে এসেছি।’’ জানা গিয়েছে, এমনভাবে রাজস্থানের ঝলচক্কি, চিতোর, উদয়পুর, যোধপুর, অজমের শরিফ প্রভৃতি এলাকায় থাকা সৈয়দপুর সহ মালদহের কালিয়াচকের অসংখ্য পরিযায়ী শ্রমিকরা আফরাজুল কাণ্ডের পর আতঙ্কে বাড়ি ফিরে আসছেন। আফরাজুলের বড় মেয়ের জামাই মিঠু শেখ শ্বশুরের সঙ্গেই থাকতেন। তিনি বলেন, ‘‘দোয়িন্দা গ্রামে আমরা আর নিজেদের নিরাপদ মনে করছি না। তাই বাধ্য হয়ে ফিরে এসেছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement