কলকাতার ভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে শিলিগুড়িতে বামেদের মিছিল। ছবি: সন্দীপ পাল।
পরের শনিবারের জন্য যেন আগের শনিবারেই বার্তা দিয়ে রাখল সিপিএম ও তার শরিকেরা। তেমনটাই ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন শহর শিলিগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা। কারণ, শনিবার দিনভর দফায় দফায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হয়েছে। সেই আবহাওয়া উপেক্ষা করে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়ে বামেদের এ দিনের মিছিলে ভিড় উপচে পড়েছে।
বামেদের তরফে শিলিগুড়ির মেয়র পদপ্রার্থী অশোক ভট্টাচার্যের বার্তাটি এ রকম—‘‘কলকাতায় এ দিন ভোটের নামে যে সন্ত্রাস হয়েছে, তার নিন্দার ভাষা নেই। তবে পুরভোটে আর পাঁচটা জায়গায় যা-ই হোক, শিলিগুড়ি বড় কঠিন ঠাঁই। আগামী শনিবার এখানে দাদাগিরির চেষ্টা হলে গণ-প্রতিরোধ হবে।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকারের দাবি, ভোটের সময় শিলিগুড়িতে রক্তারক্তির ঐতিহ্য নেই। তাই শান্তিতে ভোট-পর্ব মেটানো নিশ্চিত করতে হবে পুলিশ-প্রশাসনকে। তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘ভোট নির্বিঘ্ন না হলে মানুষ যে ঘরে বসে থাকবেন না, তা এ দিনের মিছিলে স্পষ্ট। দুর্যোগ মাথায় নিয়ে পথে নেমে মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছেন, এটা শুধু সন্ত্রাসের প্রতিবাদে নয়, প্রতিরোধেরও ইঙ্গিতবাহী মিছিল।’’
রাজ্যের অন্য ৯০টি পুরসভার মতো আগামী শনিবার, ২৫ এপ্রিল শিলিগুড়িতেও পুরভোট। তবে রাজ্যের অন্যত্র যেমন ভোট ঘোষণার পর থেকেই বামেরা শাসক দলের বিরুদ্ধে লাগাতার সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলছেন, তুলনায় শিলিগুড়ির ছবিটা আলাদা। এখানে তৃণমূলের বিরুদ্ধে খুচখাচ হামলা-হুমকির অভিযোগ উঠলে, প্রায় প্রতিটি জায়গায় একই ধরনের পাল্টা অভিযোগ রয়েছে বামেদের বিরুদ্ধে। যা এলাকার বাম নেতাদের একাংশের ব্যাখ্যায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে, ‘গণ প্রতিরোধ’।
শুধু তা-ই নয়, শহরের যে কোনও প্রান্তে বাম নেতা-কর্মীরা কেউ আক্রান্ত হয়েছেন বা হুমকির মুখে পড়েছেন শুনলে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ছুটতে দেখা যাচ্ছে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকবাবুকে। কখনও ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে হামলাকারীদের প্রতি সতর্কবার্তা দেওয়া এবং পুলিশ-কর্তাদের ফোন করে ক্ষোভ জানানো, নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে থানায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখানো বা পুলিশকে দু’কথা শুনিয়ে দিতেও দেখা যাচ্ছে তাঁকে। এমনকী, ‘প্রয়োজনে পুলিশের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ করা হবে’ বলে হুঁশিয়ারি দিতেও শোনা গিয়েছে বামেদের এই মেয়র পদপ্রার্থীকে।
কলকাতা পুরভোটে এ দিন বিরোধীদের আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ চাউর হতে আচমকা এ দিন দুপুরে মিছিলের ডাক দেন অশোকবাবু। বাঘাযতীন পার্ক থেকে মিছিল শুরু হওয়ার কথা বিকেল ৪টেয়। এত অল্প সময়ের ওই সিদ্ধান্তে কতটা সাড়া মিলবে, তা নিয়ে তাই চিন্তায় ছিলেন দলের অনেকে। কিন্তু দুর্যোগের আবহাওয়াতেও মিছিলের জন্য জড়ো হওয়া ভিড়, তাঁদের অবাক করে দেয়। বাঘাযতীন পার্ক থেকে পুরসভার সামনে দিয়ে গিয়ে হিলকার্ট রোডের এয়ারভিউ মোড়ে গিয়ে মিছল শেষ হয়। বামেদের দাবি, মিছিলে ১০ হাজার (পুলিশের হিসেবে হাজার দেড়েক) লোক ছিল।
আলাদা ভাবে হলেও প্রায় বামেদের সুরে কংগ্রেস-বিজেপি নেতারাও জানিয়েছেন, ভোটের দিন সন্ত্রাসের চেষ্টা হলে তা রুখে দেওয়ার ক্ষমতা শিলিগুড়ির মানুষের আছে। বিজেপি-র দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার মত, ‘‘এখানকার মানুষ অশান্তি চান না, সেটা লোকসভা ভোটে বুঝেছি। কাজেই পুরভোটে কেউ বেচাল কিছু করতে চাইলে, মানুষই পথে নেমে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করবেন। সেই বিশ্বাস আমার আছে।’’ দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস (সমতল) সভাপতি শঙ্কর মালাকারের দাবি, ‘‘অতীতে যেমন শান্তিশৃঙ্খলা নষ্টের চেষ্টা হলে শিলিগুড়ির মানুষ গণ-প্রতিরোধ গড়ে হামলাকারীদের হটিয়েছেন, ভোটের সময় তার অন্যথা হবে না।’’
যা শুনে শিলিগুড়ির তৃণমূলের নেতাদের কটাক্ষ, ‘‘বিরোধীরা শান্তির জায়গাতেও অশান্তির ভূত দেখছেন! বামেরা গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করতে পারেন বলে আগাম সাফাই দিচ্ছেন।’’ তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের কথায়, ‘‘বাম আমলে ভোটের সময়ে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের উপরে নানা অত্যাচার হতো।
ক্ষমতায় এসে আমরা ওঁদের পথে হাঁটিনি।’’ গণ-প্রতিরোধের ডাক নিয়ে বামেদের পাল্টা বিঁধে গৌতমবাবুর মন্তব্য, ‘‘শিলিগুড়ির মানুষের বড় অংশই বামেদের আসল চেহারাটা জানেন। কাজেই কেউ অহেতুক গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করলে এলাকাবাসীই রুখবেন।’’