শ্রোতা: বাড়িতে আশিস। রাস্তার ও পারে সভা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
রাস্তার ধারে মঞ্চ বেধে তাঁর দিকে একের পর এক আক্রমণ শানাচ্ছেন নেতারা। আর মঞ্চের ঠিক উল্টোদিকে, রাস্তার অন্য দিকে নিজের বাড়ির মূল ফটকে বসে তা শুনে চলছেন তিনি। সোমবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত এমন ঘটনারই সাক্ষী থাকল আলিপুরদুয়ার শহরের মাধবমোড় এলাকা।
মাধবমোড় এলাকাতেই আলিপুরদুয়ার পুরসভা। যার ঠিক উল্টোদিকে বাড়ি ওই পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান আশিস দত্তের। যিনি সম্প্রতি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। দিন কয়েক আগে তাঁর আমলে পুরবোর্ডের দুর্নীতি নিয়ে পুরসভার সামনে বিজেপি একটি সভা করেছিল। সেই সভায় উপস্থিত থেকে আশিস দাবি করেছিলেন, তিনি কখনও দুর্নীতি করেননি। কিন্তু তাঁর আমলে তৃণমূলের কয়েকজন কাউন্সিলর দুর্নীতি করেছিলেন। ওই দিন তৃণমূলের জেলা শীর্ষ নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধেও ‘ক্ষমতাবলে’ আত্মীয়দের চাকরি দেওয়া ও সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন আশিস।
সোমবার বিজেপির সভাস্থলের একই জায়গায় একটি সভা করে তৃণমূল। সভার বিষয় বিজেপির মিথ্যাচার ও নতুন কৃষি আইন প্রত্যাহার হলেও তা কার্যত আশিসকে আক্রমণ করার মঞ্চে পরিণত হয়। তবে মুখে অবশ্য আশিসের নাম নেননি তৃণমূলের জেলা নেতারা। তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৃদুল গোস্বামী বলেন, “আলিপুরদুয়ারের মানুষ জানেন, কারা সরকারি জমি দখল করে, নর্দমা বন্ধ করে দিয়ে সম্পত্তি তৈরি করে মাসের খরচ চালাচ্ছেন। দল অনেক দিয়েছে, দলের থেকে অনেক নিয়েছেনও। যখন বুঝলেন দল থেকে নেওয়ার আর কিছু নেই, তখন বিজেপিতে যোগ দিলেন। মানুষও তা বুঝেছে।” তৃণমূল বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “এত দিন আপনি তৃণমূলের থেকে সব নিলেন। আর এখন সেই তৃণমূলই আপনার কাছে খারাপ হয়ে গেল।” চেয়ারম্যান পদ নিয়ে দলের চুক্তিও তাঁদের কাছে আছে বলে জানিয়ে দেন সৌরভ। আশিস পাল্টা বলেন, “আমার বাবা আমাকে অনেক সম্পত্তি দিয়ে গিয়েছেন। আমি পুর্ত দফতরের ঠিকাদারির কাজও করতাম। তাই আমার আয়ের উৎস না খুঁজে তৃণমূল নেতারা নিজেরা সম্পত্তি কী করে বাড়াচ্ছেন, তা মানুষকে জানান। তা ছাড়া চেয়ারম্যান নিয়ে চুক্তি হলেও, বিধায়ক নিজেই তা মানতে আমাকে বারণ করেছিলেন।”
এ দিন তৃণমূল নেতাদের আক্রমণের লক্ষ্যে ছিলেন বিজেপিতে যাওয়া প্রক্তন সাংসদ দশরথ তিরকেও। তৃণমূলের জেলা সভাপতি মৃদুল গোস্বামী বলেন, “কিছু পচা আলু বিজেপিতে গিয়েছেন। যাদের বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা মেনে নিতে পারছেন না। সে জন্য কুমারগ্রামের পচা আলু এখনও নিজের এলাকায় যেতে পারলেন না।” যদিও বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও দশরথকে ফোনে পাওয়া যায়নি।