প্রতীকী ছবি
এপ্রিল থেকে অক্টোবর। সাত মাসে জলপাইগুড়ি জেলা থেকে উদ্ধার হয়েছে সাত হাজার লিটারেরও বেশি চোলাই মদ। আবগারি দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘এ তো হিমশৈলের চূড়া মাত্র।’’ শিলিগুড়িতে ও দার্জিলিং জেলার গ্রামীণ এলাকা থেকেও চোলাই মদ বিক্রির কথা শোনা গিয়েছে বারবার।
কেন এত রমরমা চোলাইয়ের? আবগারি দফতরের কর্তাদের ধারণা, এই জেলায় কম দামি মদের চাহিদা বেশ বেশি। তুলনামূলক ভাবে কম দামে মদ মেলে দেশি মদের দোকানগুলোতে। কিন্তু প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বর্গ কিলোমিটারের জলপাইগুড়ি জেলায় দেশি মদের অনুমোদিত দোকানের সংখ্যা মাত্র ৪০। মালবাজার, মেটেলি, বানারহাট, নাগরাকাটার বিস্তীর্ণ এলাকায় দেশি মদের দোকান না থাকায় চোলাইয়ের ঠেকের বাড়বাড়ন্ত হয়েছে বলে দাবি। জেলা সদর জলপাইগুড়ি শহর থেকে হলদিবাড়ি পর্যন্ত প্রায় ২৯ কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশে কোথাও লাইসেন্স প্রাপ্ত দোকান নেই। সেই সুযোগে রাজ্য সড়কের দু পাশ থেকে আশেপাশের গ্রামে, গলিতে চোলাইয়ের ঠেকের রমরমা বলে অভিযোগ।
সেই সঙ্গেই আবগারি দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, দেশি মদের দোকানগুলোতেও কম দামের মদের কদর বেশি। তাঁরা জানাচ্ছেন, একটি দেশি মদের ছ’শো মিলিলিটারের দাম ৩৫ টাকা। আর একটির দাম ৭৫ টাকা। জলপাইগুড়ি জেলায় কম দামি মদটিরই বেশি বিক্রি। চোলাইয়ের দাম আরও কম। তার চাহিদাও বেশি।
চাহিদা বেশি থাকায় বেআইনি চোলাইয়ের কারবারও জমে উঠেছে জেলার নানা প্রান্তে। লোকচক্ষুর আড়ালে অনেক জায়গাতেই এই ধরনের মদ বিক্রি হয়। আবগারি দফতর জানাচ্ছে, ক্রেতারা নিজেদের স্বার্থেই এই সব দোকানের খবর প্রশাসনের কানে তোলে না। খুব বড় কোনও গোলমাল না হলে, তাই নানা আড়াল-আবডালে বছরের পরে বছর ধরে এমন দোকান চলতে থাকে।
লুকিয়ে থাকা সেই সব দোকানে চোলাই তৈরি হয় কোনও নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই। আবগারি দফতরের এক কর্তা জানান, কোথাও কোথাও কাছাকাছি কয়েকটি চোলাইয়ের দোকানও রয়েছে এবং সেই দোকানগুলো পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে অত্যন্ত বিপজ্জনক ভাবে মদ বানাচ্ছে। তার প্রমাণ মিলেছে উদ্ধার করা চোলাই মদের নমুনা থেকেও।
তবে অনেক গ্রামেই দাবি, প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছো চোলাই। এক সময়ে চা বাগানে হাটের দিন শুধু হাঁড়িয়া নিয়ে বসে থাকতে দেখা যেত মহিলাদের। এখন প্লাস্টিকের প্যাকেটে ভরা লাল রঙের চোলাইও মিলছে। দেশি মদের মতো আকর্ষণীয় করতে চোলাইতে মেশানো হচ্ছে রং। আবগারি দফতর জানিয়েছে, নিয়মিত অভিযান করা হয়। তবে নজরদারি আরও বাড়ানোও হবে