গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ভাবেই থাকে পরীক্ষার উত্তরপত্র। নিজস্ব চিত্র
উত্তরপত্র উধাও পরীক্ষার্থীদের! মালদহের গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞানের প্রথম সিমেস্টারের একটি বিষয়ের উত্তরপত্রের খোঁজ নেই। ছ’মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষা হয়েছে। ফল বেরিয়েছে অগস্টে। কিন্তু উত্তরপত্র হারিয়ে যাওয়ায় উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ফল এখনও বেরোয়নি। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে চলতি মাসের ১৩ তারিখে। সেইদিনই ইংরেজবাজার থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। পুলিশ তদন্তও শুরু করেছে।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষার উত্তরপত্র খোয়া যাওয়ায় বড়সড় প্রশ্ন উঠে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্ব নিয়ে। কারণ এই ঘটনার দায় নিয়ে ওই বিভাগেই শুরু হয়েছে দোষারোপ ও পাল্টা দোষারোপের পালা। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ২৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। শেষ হয়েছিল ১৫ মে। অগস্টে ২০টি বিভাগের মধ্যে উদ্ভিদবিজ্ঞান বাদে বাকি ১৯টিরই ফল প্রকাশিত হয়। উদ্ভিদ বিভাগ সূত্রেরই খবর, সেই সময় ফল প্রকাশে দেরি নিয়ে শীর্ষ কর্তৃপক্ষ খোঁজ নেওয়ায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধান জানিয়েছিলেন, শিক্ষকদের উত্তরপত্র জমা দিতে বিলম্ব হওয়াতেই ফল প্রকাশ করা যাচ্ছে না। অভিযোগ, এরপর প্রায় দু’মাস ধরে একই জবাব শীর্ষ কর্তৃপক্ষকে দিয়ে আসছিল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ। শেষে ১৩ অক্টোবর জানা যায়, ওই বিভাগের প্রথম সিমেস্টারের একটি বিষয়ের উত্তরপত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হইচই পড়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে। নজিরবিহীন এই ঘটনায় চরম অস্বস্তিতে পড়ে যান কর্তৃপক্ষ। খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। ১৩ অক্টোবরই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন মালদহের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া।
ঘটনাটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সমূহের নিয়ামক বিশ্বরূপ সরকার। তিনি বৃহস্পতিবার বলেন, “বিভাগ থেকে উত্তরপত্র উধাওয়ের ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এমন ঘটনা কখনওই কাঙ্খিত নয়। সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধান বিষয়টি জানালে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।’’ তিনি আরও জানান, উদ্ভিদ বিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান বিবেকানন্দ মণ্ডলকে শো-কজ করা হয়েছে। এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্বাগত সেন বলেন, ‘‘এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। আর এসব ঘটনায় সেই পরীক্ষার্থীর অন্য বিষয়ে পাওয়া সর্বোচ্চ নম্বরই সংশ্লিষ্ট পত্রে দেওয়া হয়। তবে পরীক্ষার্থীরা চাইলে নতুন করে পরীক্ষাও হতে পারে।’’
উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান বিবেকানন্দ মণ্ডল বলেন, “বিভাগ থেকে উত্তরপত্র উধাও হওয়া কখনওই সম্ভব নয়। কারন এখানে সমস্ত উত্তরপত্রই মজুত রয়েছে।” তাহলে উধাও হল কী করে? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘উত্তরপত্র জমা দেওয়াই হয়নি। সংশ্লিষ্ট শিক্ষক উত্তরপত্র জমা দিলে অবশ্যই এখানে থাকত।” ওই উত্তরপত্র দেখার দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক চন্দন বর্মণ। তিনি বললেন, “উত্তরপত্র বিভাগে বসেই দেখা হয়েছিল। উত্তরপত্র বিভাগেই জমা দেওয়া হয়েছিল। এরপর কী হয়েছে তা আমার জানা নেই।”