তৈরি হচ্ছে গুহাপথ। — নিজস্ব চিত্র
তীর্থ করতে এ বার আর অমরনাথ অবধি যাত্রার দরকার পড়বে না। খোদ জলপাইগুড়ি শহরের মুনলাইট ক্লাবের কালী এ বার পুজো পাবেন অমরনাথের গুহাতেই। শ্রীনগর থেকে ১৪১ কিলোমিটার দূরে, ১২ হাজার ৭৫৬ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত সেই গুহার আদলেই এ বার তাদের মণ্ডপ।
জলপাইগুড়ির কমার্স কলেজের মাঠে মণ্ডপটি তৈরি করছেন ফালাকাটার শিল্পী রঞ্জন বিশ্বাস। গুহা বানাতে প্রাথমিক ভাবে তিনি ব্যবহার করছেন বাঁশ এবং লোহার পাইপ। তার ওপর চট দিয়ে ঢেকে দেওয়ার হচ্ছে। তার ওপর প্লাস্টার অব প্যারিস বসিয়ে রঙ করে পাহাড়ের আদল আনা হচ্ছে। গুহার থেকে বেরনোর জন্য আশি ফুট লম্বা রাস্তা তৈরি হচ্ছে। রঞ্জনবাবু বলেন,“অমরনাথ গুহার বাইরের অংশটি অবিকল তৈরির চেষ্টা চলছে।”
ভেতরের অংশটি অবশ্য পুরোটাই শিল্পীর কল্পনা। গুহার ভেতরে শিবের বিভিন্ন রূপ এবং বিয়ের নানা গল্প থার্মোকলের কারুকাজের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। দক্ষযজ্ঞও দেখানো হবে। পিচবোর্ড দিয়ে তৈরি হচ্ছে স্তম্ভ। একদম ভেতরে থাকবে পাঁচ ফুট লম্বা শিবলিঙ্গ। অনেকটা নটরাজের আদলে তৈরি কালী মূর্তি হবে নৃত্যরতা। মণ্ডপ এবং রাস্তা জুড়ে থাকবে চন্দননগরের শিল্পীদের আলোকসজ্জা।
মুনলাইটের পুজো জলপাইগুড়ি শহরের সবচেয়ে প্রাচীন পুজো। এ বার তাদের ৫৪তম বছর। ক্লাবের সম্পাদক দেবজ্যোতি ঘোষ বলেন, “কলেজের ভবন স্থাপনের বহু আগে থেকে এই জায়গায় আমাদের পুজো হয়ে আসছে। পুরনো ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছি।”
জলপাইগুড়ি শহরে এক সময়ে রূপশ্রী সিনেমা হলের সামনে যুবকেরা আড্ডা মারতেন। তাঁরা কোনও একটি বিশেষ পাড়ার বাসিন্দা নন। তাঁদের উদ্যোগেই মুনলাইট ক্লাব তৈরি হয়। ক্লাবের সদস্যরা জানান, প্রতি বছর বড় করে কালীপুজো শুরু করেন কার্তিক দত্ত এবং শিবশঙ্কর ঘোষরায়, তপনকুমার রায়রা। এখন পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন হাকিমপাড়ার প্রতাপ দাস, পান্ডাপাড়ার রঞ্জিত সিংহ, আদরপাড়ার অনুপ দাস, কলেজপাড়ার সাধন ভৌমিক। তবে পরবর্তী প্রজন্ম এখনও পুজোর হাল না ধরায় এই ঐতিহ্য বহন করা নিয়ে সকলেই কমবেশি চিন্তিত।