করলা নদীর হাল এখন এমনই। ছবি: সন্দীপ পাল।
বাড়ছে দূষণ। কমছে গভীরতা। হারিয়ে যেতে বসেছে উত্তরের ‘টেমস’ নামে পরিচিত জলপাইগুড়ির করলা নদী। শহরের ফুসফুসের বিপন্ন দশা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে বিরোধী শিবিরের পুরভোটের প্রচারে। নির্বাচনী ইস্তেহারেও ‘করলা অ্যাকশন প্ল্যান’ নিয়ে শুরু হয়েছে চাপানউতোর।
পথ সভায় তো বটেই! মিছিলে পা মিলিয়ে স্লোগানে তৃণমূল বিরোধী শিবিরের মুখে ফিরছে করলা নদীর কদর্য দশার কথা। বিজেপির নেতা কর্মীরা বাড়িতে ঘুরে ভোট প্রার্থনা করার ফাঁকে গল্পের ছলে প্রশ্ন উস্কে দিচ্ছেন—কে বলবে দিনবাজার থেকে পণ্য বোঝাই নৌকা এক সময় করলার জলে ভেসে কিংসাহেবর ঘাট হয়ে পৌঁছে যেত তিস্তায়। সেখান থেকে বার্নিস ঘাটে। কংগ্রেসকর্মীরা আরও এক ধাপ এগিয়ে গলা চড়াচ্ছেন—থার্মোকল, নিষিদ্ধ প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের মতো আবর্জনায় ভরা নদীবক্ষ। স্রোত হারানো নদীতে বেড়েছে শ্যাওলার সংসার। শহরের সমাজপাড়া এলাকায় প্রচারের তীব্রতা বেশি। কারণ সেখানে করলার রুগ্ণ দশা বেশি স্পষ্ট। জেলা যুব বিজেপি সভাপতি জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন, “শহরের নিকাশি নালা পথে বয়ে আসা গরলের ছোঁয়ায় সুন্দরী করলা কৃশ হয়ে এখন ধুঁকছে।” তাঁর অভিযোগ, ভোট এলে শাসকদলের ইস্তেহারে করলা অ্যাকশন প্ল্যান নিয়ে কথা হয়। কিন্তু পরে কোন কাজ হয় না।
এসএফআই-র রাজ্য কমিটির সদস্য তথা ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী প্রদীপ দে বলেন, “করলার দূষণ এতটা বেড়েছে যে, নদী পাড়ে দুদণ্ড দাঁড়িয়ে থাকার কথা এখন কেউ ভাবে না।” তাঁর প্রশ্ন কংগ্রেস ভেঙে বোর্ড দখলের সময় তৃণমূল থেকে বলা হয় দ্রুত করলা নদী সংস্কারের ব্যবস্থা করা হবে। কোথায় কি! পরিস্থিতি আরও বেহাল হয়েছে। নির্বাচনের মুখে ফের একই কথা বলা হচ্ছে। বাম শিবিরের অভিযোগ অস্বীকার করতে পারছেন না জেলা কংগ্রেস সভাপতি নির্মল ঘোষ দস্তিদার। তিনি জানান, চার বছর আগে কংগ্রেস পরিচালিত পুর বোর্ড থেকে প্রায় ৯ লক্ষ টাকা ব্যবরাদ্দ ধরে করলা অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে আর্থিক সাহায্যের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানো হয়। ওই প্রকল্পে সংরক্ষণ, সৌন্দর্যায়ন ছাড়াও শহরের বিভিন্ন নিকাশি নালার জল শোধন করে নদীতে ফেলার মতো একগুচ্ছ পরিকল্পনা রয়েছে। ওই কাজের জন্য খরচ ধরা হয়েছে ২৪২ কোটি টাকা। নির্মলবাবু বলেন, “প্রকল্প রূপায়ণে তৃণমূলের কোনও আগ্রহ নেই। ওঁরা শুধু চমক দিয়ে ভোট করতে ব্যস্ত।”
কেন পুর ভোট প্রচারে করলাকে ঘিরে সমালোচনার ঝড় উঠবে না? বিভাগীয় শহরকে দুভাগে ভাগ করে তিরতির করে বয়ে চলা ওই নদীর একদিকে প্রশাসনিক কার্যালয়, হাসপাতাল, সংশোধনাগার। অন্যদিকে রয়েছে বানিজ্যিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গলে উৎপন্ন হয়ে শহরের পেট চিরে এখন কাদোবাড়ির কাছে তিস্তায় মিলেছে। নদীর সঙ্গে শহরের আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। তাই ভোট প্রচারে তার প্রতিফলন ঘটেছে। যদিও প্রদেশ তৃণমূলের অন্যতম সম্পাদক কল্যাণ চক্রবর্তী মনে করেন, করলা নদীকে নিয়ে রাজনীতি না করে হাতে হাত মিলিয়ে প্রত্যেককে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসা উচিত। তাঁর দাবি, রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে করলা সংস্কারের কাজ শুরু করেছে। ধীরে ধীরে সবই হবে।