জোট বোঝানো যায়নি, স্বীকার করলেন সূর্য

কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী বোঝাপড়া আসলে জোট না আসন সমঝোতা, না কি আসন ভাগাভাগি, তা দ্রুততার সঙ্গে মানুষকে বোঝানো সম্ভব হয়নি৷ নিজেদের খারাপ ফলের অন্যতম কারণ যে সেটা, আজ জলপাইগুড়িতে তা মেনে নিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র ৷

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৬ ০২:১৭
Share:

জলপাইগুড়িতে সূর্যকান্ত মিশ্র।

কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী বোঝাপড়া আসলে জোট না আসন সমঝোতা, না কি আসন ভাগাভাগি, তা দ্রুততার সঙ্গে মানুষকে বোঝানো সম্ভব হয়নি৷ নিজেদের খারাপ ফলের অন্যতম কারণ যে সেটা, আজ জলপাইগুড়িতে তা মেনে নিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র ৷

Advertisement

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক এদিন বলেন, “যে ভাবে এবারের বিধানসভা নির্বাচন লড়া হয়েছিল, তাতে করে একটা ইতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল৷ এবং সরকার অপসারণ করা যে সম্ভব, তা নিয়েও অনেকের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল৷ কিন্তু সময় এতই কম ছিল যে, কংগ্রেসের সঙ্গে এই বোঝাপড়া আসলে জোট না আসন সমঝোতা নাকি আসন ভাগাভাগি সেটা মানুষকে বোঝানো সম্ভব ছিল না৷ সে জন্যই আমরা সহজে বলবার চেষ্টা করতাম, এটা মানুষের জোট৷ দলমত নির্বিশেষে সেই সব মানুষের জোট, যাঁরা সরকারকে হঠাতে চায় এবং তৃণমূল ও বিজেপিকে পরাস্ত করতে চায়৷ কিন্তু এত দ্রুততার সঙ্গে মানুষকে সেটা বোঝানো যায়নি৷” তবে জোট নিয়ে তাঁর দলের অন্দরে যাই চলুক না কেন, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক কিন্তু এ দিন সাফ বলেন, “মানুষের জোট এ রাজ্যে দাঁড়াবে কি দাঁড়াবে না, তা ভবিষ্যৎই বলবে৷”

তবে দলের খারাপ ফলের জন্য এ দিন নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতার কথাও স্বীকার করে নিয়েছেন সূর্যবাবু৷ একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকারও সমালোচনা করেন তিনি৷ তার সাফ কথা, নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ বলতে যা বোঝায়, তার পুরোটা এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে হয়নি৷ সূর্যবাবুর অভিযোগ, “নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী রাজ্যে ৯৯.৫০ শতাংশ ভোটারের এপিক কার্ড রয়েছে৷ অর্থাৎ এপিক কার্ড নেই মাত্র ০.৫০ শতাংশ মানুষের৷ অথচ, নির্বাচন কমিশনের তথ্য থেকেই জানতে পারলাম, একেকটা বিধানসভা কেন্দ্রে ষাট থেকে সত্তর হাজার ভোটারের ভোট হয়েছে পিভিএস বা ফটো ভোটার স্লিপের সাহায্যে৷” তার অভিযোগ, এই ফটো ভোটার স্লিপগুলি আদতে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের হাতেই ছিল ৷ তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন, “এরপরও বলব, এবারের নির্বাচনে খারাপ ফলের জন্য সব চেয়ে বেশি দায়ি আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা৷”

Advertisement

বস্তুত, দলের সেই সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটাতেই শুক্রবার জলপাইগুড়িতে আসেন সূর্যকান্তবাবু৷ সঙ্গে রয়েছেন বিমান বসুও৷ দু’দিন ধরে দলের জেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা৷ জলপাইগুড়িতে কী করে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটানো যায় তা নিয়ে আলোচনা করেন৷ জলপাইগুড়িতে দলকে ঘুরে দাঁড় করাতে জেলার নেতাদের আন্দোলনে নামার পরামর্শ দেন তাঁরা৷ এ ক্ষেত্রে এই মুহুর্তের অন্যতম সমস্যা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ইস্যুতে আন্দোলন গড়ে তোলার পরামর্শ দেন তাঁরা৷ বৈঠক শেষে বিমানবাবু বলেন, “মানুষের জ্বলন্ত সমস্যা নিয়ে দলকে আন্দোলনে নামতে হবে৷ দু’দিনের বৈঠকে দলের জেলা নেতাদের সেই পরামর্শই দিয়েছি৷” দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ইস্যুতে রাজ্য সরকারের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, “সরকার তো একটি টাস্ক ফোর্স তৈরি করেছিল৷ সেটা কী করছে ?”

এদিকে শুক্রবার জলপাইগুড়িতে আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামী বলেছিলেন, কংগ্রেসের নিয়ে সিপিএমের অবস্থান কী তা নিয়ে ব্যাখ্যা চাইবেন তিনি৷ সেই প্রসঙ্গে বিমানবাবু বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে কলকাতায় রাজ্য বামফ্রন্টের বৈঠকে আলোচনা হবে৷’’ এমনকি প্রয়োজনে আরএসপি-র সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনাও করবেন তাঁরা ৷

এ দিকে ঢাকায় জঙ্গি হামলা প্রসঙ্গে সূর্যবাবু বলেন, ‘‘বাংলাদেশ সরকার এই মুহুর্তে সেখানে একটা কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে রয়েছে৷ সীমান্তের এপাড়ে আমাদের সরকার ও সাধারণ মানুষের উচিত রাজ্যের মানুষের মধ্যে যে সম্প্রীতি রয়েছে তাকে অক্ষুণ্ণ রাখা৷’’

নিজস্ব চিত্র

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement