বধূকে বিষ খাইয়ে খুনের অভিযোগ

প্রেম করে বিয়ে করার জন্য শ্বশুর বাড়িতে উঠতে বসতে গঞ্জনা লেগেই ছিল৷ ছিল পণের জন্য চাপও৷ অভিযোগ, পণ না পেয়ে মাঝে মধ্যে বধূকে মারধর, এমনকী তাঁকে বিক্রি করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হতো।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৪৩
Share:

প্রেম করে বিয়ে করার জন্য শ্বশুর বাড়িতে উঠতে বসতে গঞ্জনা লেগেই ছিল৷ ছিল পণের জন্য চাপও৷ অভিযোগ, পণ না পেয়ে মাঝে মধ্যে বধূকে মারধর, এমনকী তাঁকে বিক্রি করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হতো। তাতেও কাজ না হওয়ায় বধূকে বিষ খাইয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল শাশুড়ির বিরুদ্ধে। বুধবার জলপাইগুড়ির পাহাড়পুরের ঘটনা।

Advertisement

প্রায় ছ’মাস প্রেমের সম্পর্কে থেকে বছর খানেক আগে পাতকাটার বক্‌সীপাড়া ও পাহাড়পুরের ঢিংপাড়া—পাশাপাশি এই দুই গ্রামের বাসিন্দা মুক্তি রায় (১৮) ও অভিজিৎ মাহাতোর বিয়ে হয়। মুক্তি তখন কালিয়াগঞ্জ স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। অভিজিৎ কখনও গাড়ি, কখনও টোটো চালায়৷

মুক্তির বাড়ির লোকেদের অভিযোগ, প্রেম করে বিয়ে করার জন্য শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে শুরু থেকেই নানা গঞ্জনা শুনতে হতো মুক্তিকে৷ তা সত্ত্বেও শ্বশুরবাড়ির চাহিদা মতো তাঁরা কুড়ি হাজার টাকা পণ দেন৷ তার পরেও অভিজিতের মা চন্দ্রাবতী মাহাতো মুক্তির বাড়ির লোকেদের কাছে আরও পাঁচ লক্ষ টাকা ও একটি মোটরবাইক দাবি করে৷ তা দিতে অস্বীকার করায় প্রথমে মানসিক ও পরে ওই বধূর উপরে শারীরিক নির্যাতন শুরু হয় বলে অভিযোগ৷

Advertisement

বধূর মা ললিতা রায়ের অভিযোগ, ‘‘অভিজিৎ এবং তার মা, বাবা ও দাদা মিলে মাঝেমধ্যেই ওকে মারধর করত৷ এমনকী ওকে বিহারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেওয়ার হুমকি দিত৷’’

বধূর বাড়ির লোকেদের কথায়, তাতেও কাজ না হওয়ায় গত ১১ জানুয়ারি চন্দ্রাবতী জোর করে চার বার তাঁর মুখে বিষ ঢেলে দেয়৷ পরের দিন শ্বশুর বাড়ির লোকেরা তাঁদের জানায়, পেটের ব্যথার জন্য মুক্তিকে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ হাসপাতালে ছুটে গিয়ে সব জানতে পারেন মুক্তির বাড়ির লোকেরা৷

১৩ জানুয়ারি তাঁরা জানতে পারেন মুক্তিকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ এর পর মুক্তি নিজেই বাপের বাড়িতে ফিরে আসেন৷ কিন্তু এক দিন পরেই সেখান থেকে তাঁর শ্বশুর দশরথ মাহাতো তাঁকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান৷ অভিযোগ, সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরে মুক্তির শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। ১৬ জানুয়ারি ফের প্রথমে জলপাইগুড়ি হাসপাতাল ও সেখান থেকে তাঁকে শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোম হয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়৷ সেখানেই মঙ্গলবার বিকেলে তাঁর মৃত্যু হয়৷

ললিতাদেবী বলেন, “১২ জানুয়ারি মেয়েকে যখন হাসপাতালে দেখতে যাই, তখনই সে জানিয়েছিল, তাঁর শাশুড়ি তাঁকে জোর করে চার বার বিষ খাইয়েছে৷” এ দিন জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায় মেয়ের শাশুড়ি, শ্বশুর, স্বামী ও ভাসুরের নামে অভিযোগ দায়ের করেন ললিতাদেবী৷ যদিও অভিযুক্তদের কাউকেই এ দিন বাড়িতে পাওয়া যায়নি৷ অভিজিতের এক কাকিমা ছবি মাহাতো বলেন, ‘‘বাড়ির বেশির ভাগ লোকই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে রয়েছেন৷’’ বধূর বাড়ির লোকেদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “বাড়িতে কোনও অশান্তি ছিল না৷ যতটুকু জানি ওই মুক্তি ভুল করে নিজেই বিষ খেয়ে ফেলেছিলেন৷” পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে৷

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement