শিলিগুড়ির সেবক রোডে ঝড়ে উড়ে এসে রাস্তায় পড়েছে বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
পুরভোট এগিয়ে আসতেই রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে লড়াইয়ের জেরে তাতছে মালদহের দুই পুরসভা। শনিবার সকালে পুরাতন মালদহ পুরসভার ১৪ নম্বর ওর্য়াডের ঘোষ পাড়ায় সিপিএমের নির্বাচনী কার্যালয়টি আধ পোড়া অবস্থায় দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা শুক্রবার গভীর রাতে নির্বাচনী কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। সকাল ১০ টা নাগাদ ওই ওর্য়াডেরই কংগ্রেস প্রার্থী পলাশ ঘোষকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে পুরাতন মালদহ পুরসভার বিদায়ী ভাইস চেয়ারম্যান তথা এলাকার তৃণমূলের প্রার্থী স্বাধীন ঘোষের বিরুদ্ধে।
দুটি ঘটনায় মালদহ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুরাতন মালদহের মতো ইংরেজবাজার পুরসভাতে বিজেপি কর্মীদের ফেস্টুন,ব্যানার এলাকায় টাঙাতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের দিকে। যদিও তৃণমূল সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুরাতন মালদহের ঘটনা দুটির অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ইংরেজবাজারের ক্ষেত্রে এখনও কোন অভিযোগ জমা পড়েনি।’’
পুরাতন মালদহের ১৪ নম্বর ওর্য়াডের ঘোষপাড়া সিপিএম প্রার্থী বিপ্লব ঘোষের বাড়ির পাশেই রয়েছে তাঁর ভোটের কার্যালয়। শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কার্যালয়ে সাংগঠিক বিষয় নিয়ে কর্মীরা সেখানে আলোচনা করেন। সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা কার্যালয়টি আধ পোড়া অবস্থায় দেখতে পান। পুলিশ যায়।
মালদহ জেলার সিপিএমের সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য খগেন মুর্মু সহ বামফ্রন্টের প্রতিনিধিরাও ঘটনাস্থলে যান। তারপরে তাঁরা মালদহ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ওর্য়াডের সিপিএম প্রার্থী বিপ্লব বাবু বলেন, ‘‘কার্যালয়ে আমাদের দলের পতাকা,ফেস্টুন রাখা ছিল। অনেক রাত পর্যন্ত আমরা কার্যালয়ে ছিলাম। সকালে জানতে পারি কার্যালয়টি আগুনে পুড়ে গিয়েছে। তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এমন ঘটনা করেছে বলে অভিোগ রয়েছে।’’
এদিনই সকাল ১০টা নাগাদ ওই এলাকায় প্রচারে যান কংগ্রেস প্রার্থী পলাশ ঘোষ। তাঁর অভিযোগ, সেই সময় তাঁকে প্রথমে হুমকি ও পরে মারধর করেন তৃণমূল প্রার্থী তথা বিদায়ী ভাইস চেয়ারম্যান স্বাধীনবাবু। পলাশবাবুর অভিযোগ, বেশ কয়েকদিন ধরে সে আমাকে হুমকি দিচ্ছিল। আমি হুমকির তোয়াক্কা না করে প্রচারে গিয়েছিলাম। হঠাৎ করে স্বাধীন বাবু আমাকে গালি দিয়ে মারধর শুরু করে দেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের তৎপরতায় আমি রক্ষা পাই। তিনি এলাকায় সন্ত্রাস করে ভোট করাতে চাইছেন।’’ যা শোনার পরে স্বাধীনবাবু বলেন, ‘‘একেবারে ভিত্তিহীন অভিযোগ। নির্বাচনে হার নিশ্চিত জেনে প্রচারে আসার জন্য এমন অভিযোগ করছেন তিনি।’’
পুরাতন মালদহ পুরসভার পাশাপাশি এদিন ইংরেজবাজার পুরসভাতেও শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ পুরসভার ৮ নম্বর ওর্য়াডের দক্ষিন বালুচরে বিজেপি প্রার্থী সোমা দাসের সমর্থনে ফেস্টুন,ব্যানার টাঙাতে গেলে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকেরা বাধা দেন। এমনকী, তাঁদের ফেস্টুন তুলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
বিজেপির জেলা সভাপতি শিবেন্দু শেখর রায় বলেন, ‘‘পুরসভার ৮ ও ৯ নম্বর ওর্য়াডে আমাদের প্রার্থীদের সমর্থনে কোন দেওয়াল লিখন, ফেস্টুন টাঙাতে দেওয়া হচ্ছে না। শ্রীঘ্রই আমরা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাব।’’
দুই পুরসভা এলাকায় তিনটি ঘটনাতেই শাসক দলের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় অস্বস্তিতে রয়েছে জেলা নেতৃত্ব। তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘‘বিরোধীদের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাওয়ায় এমন অভিযোগ করবেই। তবে আমি কর্মী, প্রার্থীদের সংযত থাকার নির্দেশ দিয়েছি।’’
এদিকে কোচবিহারে বিভিন্ন ওয়ার্ডেও সোমবার রাতে বাম কর্মীদের হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, ২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী অজয় রায়কে বাম কর্মীরা মারধর করে। বিজেপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে তুফানগঞ্জের সাত নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী সুব্রত বসাককে তৃণমূল কর্মীরা হুমকি দিয়েছে। তাঁকে প্রার্থীপদ তুলে নিয়ে লিফলেট বিলি করতে বলা হয়েছে। তৃণমূল অবশ্য ওই অভিযোগ মানতে নারাজ।