জেলা পরিষদের পর এ বার মালদহের কংগ্রেস ও বামেদের দখলে থাকা পঞ্চায়েত সমিতিগুলিও দখলের দিকে এগোচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার মালদহে এসে দলীয় নেতৃত্ব ও জেলা পরিষদের সভাধিপতি সহ কর্মাধ্যক্ষদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন দলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা তৃণমূলের অন্যতম শীর্ষনেতা মুকুল রায়। পরে তিনি সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘৫-৭ দিনের মধ্যে মালদহ জেলার অন্তত ছ’টি পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূলের হয়ে যাবে। ফলে জেলার ১৫টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে ১২টিই আমাদের হয়ে যাবে।’’
এ দিকে বুধবারই কংগ্রেস ও সিপিএম উত্তরকন্যায় জলপাইগুড়ির বিভাগীয় কমিশনারের কাছে গিয়ে মালদহ জেলা পরিষদের সাধারণ সভা ডাকা ও দুই স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষকে অপসারণ করার ব্যাপারে চিঠি দিয়ে এসেছে। যদিও এ দিন কংগ্রেস ও বামেদের ওই উদ্যোগকে আমলই দিতে চাননি মুকুলবাবু। তিনি পাল্টা বলেন, ‘‘এখন জেলা পরিষদে তৃণমূল সংখ্যাগরিষ্ঠ। স্থায়ী সমিতিতেও আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ রয়েছি। ভোট হলেই সব প্রমাণ হয়ে যাবে।’’ তাঁর আরও দাবি, মালদহ জেলা শুধু নয়, মুর্শিদাবাদ ও উত্তর দিনাজপুর জেলার বেশিরভাগ পঞ্চায়েত ও পুরসভার বোর্ডগুলিও তৃণমূলের হবে। তবে তাঁরা কোনও দখলদারির রাজনীতি করছেন না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নে সামিল হতেই বিরোধীরা তাঁদের দলে যোগ দিচ্ছে।
বুধবার গভীর রাতে কলকাতা থেকে সড়কপথে মালদহে আসেন মুকুল রায়। ওঠেন পুরনো সার্কিট হাউজে। এ দিন সকালে তিনি ইংরেজবাজার শহরের মনস্কামনা মন্দিরে পুজো দেন। সেখান থেকে ফিরে এসে সার্কিট হাউজে দলের মালদহ জেলার নেতৃত্ব ও জেলা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বেলা ১টা পর্যন্ত বৈঠকের পর শুধু জেলা পরিষদের সদস্যদের নিয়ে শহরেরই একটি হোটেলে ফের দু’ঘণ্টা বৈঠক করেন। জানা গিয়েছে, কংগ্রেস ও সিপিএম মিলে জেলা পরিষদের দুই কর্মাধ্যক্ষের অপসারণের যে ছক কষেছে কী ভাবে তার মোকাবিলা করা যাবে, সে ব্যাপারেই বৈঠকে স্ট্র্যাটেজি ঠিক করা হয়েছে। তবে বৈঠকের বিষয় নিয়ে মুকুলবাবু বা জেলা নেতৃত্ব কেউই মুখ খোলেননি।
বিকেলে জেলার পীরানাপীর দরগায় শ্রদ্ধা জানানোর আগে সাংবাদিক বৈঠকে মুকুল রায় বলেন, ‘‘মালদহ জেলা পরিষদ আমাদের দখলে এসেছে। জেলার অনেক বিধায়কও যোগাযোগ করছেন। যদিও জেলা কংগ্রেসের সভানেত্রী মৌসম মূর বলেন, ‘‘আমরা জেলা পরিষদের দুই স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষদের অপসারণ ও সাধারণ সভা ডাকার দাবি জানানোয় শাসকদলের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। তাই টাকা ও নানা প্রলোভন দিয়ে বাকিদের কী ভাবে কেনা যায় তার ছক কষছে। কিন্তু কোনও লাভ হবে না।’’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, ‘‘মানুষের রায়কে পদদলিত করে শাসকদল একের পর এক বিরোধীদের দখলে থাকা নির্বাচিত বোর্ড দখল করছে। মালদহতেও একই খেলা তারা খেলতে চাইছে।’’