সুদিনের অপেক্ষা

খেলার সুবাদে দেশ-বিদেশের নানা জায়গায় গিয়েছেন। সন্ধ্যার পরে একা চলাফেরা করতে হয়েছে। কোথাও হেনস্থা তো দূরের কথা, হেনস্থার ভয়ও পাননি মান্তু ঘোষ। কিন্তু শে ষ অবধি কি না নিজের শহর শিলিগুড়িতেই সন্ধ্যার পরে দুই মদ্যপ যুবকের কটূক্তির শিকার হয়েছিলেন তিনি।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৭ ০২:০৭
Share:

খেলার সুবাদে দেশ-বিদেশের নানা জায়গায় গিয়েছেন। সন্ধ্যার পরে একা চলাফেরা করতে হয়েছে। কোথাও হেনস্থা তো দূরের কথা, হেনস্থার ভয়ও পাননি মান্তু ঘোষ। কিন্তু শেষ অবধি কি না নিজের শহর শিলিগুড়িতেই সন্ধ্যার পরে দুই মদ্যপ যুবকের কটূক্তির শিকার হয়েছিলেন তিনি। সদ্য পুরানো হওয়া বছরের তিক্ততম ঘটনা হয়তো এটাই।

Advertisement

যে ঘটনা বুঝিয়ে দেয় পাল্টে যাচ্ছে শিলিগুড়ি। তবে গোড়ায় চুপ থাকলেও শেষ অবধি কিন্তু প্রতিবাদে গলা ফাটাতে ছাড়েনি শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি সহ উত্তরের সব জনপদ। তার জোরে দু’দিন পরে দু’জনকে গ্রেফতারও করতে হয় পুলিশকে।

যে ঘটনাকে কালো আকাশের মধ্যে বিদ্যুতের সোনালি ঝলকানির সঙ্গে তুলনা করছেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক রথীন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি গত এক বছরে উত্তরবঙ্গে ঘটে যাওয়া একাধিক অপরাধ-অভিযোগের প্রসঙ্গ টানতে গিয়ে শিউরে উঠেছেন। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন সঙ্গীতা কুণ্ডুর অন্তর্ধান নিয়েও। রহস্যের সমাধান না হলে ভয় বাড়বে বলে তাঁদের মত। আবার কখনও বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেই যাতে ছাত্রীরা নিরাপদে ঘোরাফেরা করতে পারে, সেইটুকু অন্তত চলতি বছরে নিশ্চিত করার পক্ষে সওয়াল করেছেন। ওই অধ্যাপকের কথায়, ‘‘ভয় পাইয়ে দেওয়ার মতো অনেক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সারা বছরে দেরিতে হলেও প্রতিবাদের ঝড় শেষ অবধি উঠেছে। তাতেই কিছুটা পিছু হটেছে অশুভ শক্তি। এটাই এখন আমাদের কাছে আশার ঝলক।’’

Advertisement

তবে হতাশার ছবি উত্তরে কম নেই। তৃণমূল জমানায় ঘটা করে শুরু হয়েও গত বছরেও বালুরঘাট নাট্য উৎকর্ষ কেন্দ্র চালু হয়নি। কম আসনের ছোট বিমানও কোচবিহার থেকে নিয়মিত চালু হল না। রায়গঞ্জে আর একটা ভোট এসে গেলেও এইমসের ধাঁচে হাসপাতালের কাজ আর এগোনোর কোনও লক্ষণই নেই। আমের শহর মালদহে আম-লিচুকে কেন্দ্র করে বড় মাপের ফল প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনও তরফে হল না। আলিপুরদুয়ারের কালজানি, জলপাইগুড়ি করলা, শিলিগুড়ির মহানন্দা, জোড়াপানি, ফুলেশ্বরী সংস্কারের প্রস্তাবও চাপা পড়ে থাকল।

দক্ষিণের চেয়ে উত্তরে উন্নয়নের কাজে বরাবরই গতি কম থাকে বলে মনে করেন জলপাইগুড়ির চিত্রশিল্পী নীহার মজুমদার। তিনি বলেন, ‘‘সহিষ্ণুতা লোপাটের চেষ্টার বিরুদ্ধেও তুলি-কলম ধরছি।’’

সমতলের মতো পাহাড়েও অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ বাড়তে থাকায় উদ্বিগ্ন বিশিষ্টজনেরা। কিন্তু, পাহাড়বাসী নিশ্চিত, গত বছরে পাহাড়ে যা ঘটেছে তা সুলক্ষণ। একের পর এক উন্নয়ন বোর্ড হয়েছে।

দার্জিলিঙের প্রবীণ বাসিন্দা মনবাহাদুর সুব্বা বললেন, ‘‘গত বছরে বহু দিন পরে পাহাড়ের নেওড়াভ্যালিত জলজ্যান্ত রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার দেখা গিয়েছে। জঙ্গলে জ্যান্ত বাঘ দেখা সৌভাগ্যের প্রতীক। পাহাড়ের সুদিন ফিরবেই।’’

সেই সুদিনের আশা নিয়েই আজ নতুন বছর শুরু করবে পাহাড় থেকে সমতল—উত্তরের জনপদ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement