প্রতীকী ছবি
উত্তরবঙ্গের কিছু এলাকায় কি করোনার গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়েছে? বেশ কিছু করোনা আক্রান্তের তথ্য ঘেঁটে এমনই প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসকদের একাংশ। স্বাস্থ্য দফতররের অবশ্য দাবি, এখনও গোষ্ঠী সংক্রমণের কোনও প্রামাণ্য তথ্য মেলেনি। জলপাইগুড়ি জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দু’শো পেরিয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে জনা পঞ্চাশেক এমন রোগী রয়েছেন, যাঁরা কী ভাবে আক্রান্ত হলেন, তার কোনও নির্দিষ্ট তথ্য স্বাস্থ্য দফতর পায়নি। এঁদের মধ্যে পেশায় শিক্ষক, ছাত্র, বেসরকারি সংস্থার কর্মীরা রয়েছেন বলে দাবি।
এরই মধ্যে এ দিন ১৪ জনের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আক্রান্তের সংখ্যাও দাঁড়িয়েছে দুশো-তে।
আক্রান্তদের কয়েক জনের দাবি, তাঁরা না ফিরেছেন বিদেশ থেকে, না ভিন্ রাজ্য। লকডাউনের পর থেকে বাড়িতেই ছিলেন জলপাইগুড়ির এক শিক্ষক। মাঝেমধ্যে বাজারে গিয়েছিলেন। তিনি সংক্রমিত হয়েছেন। রাজগঞ্জের বাসিন্দা এক যুবকও গত কয়েক মাসে নিজের এলাকার বাইরে তেমন বার হননি। হঠাৎই জ্বরে আক্রাম্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং তার লালারসের নমুনায় করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। জলপাইগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গের একাধিক করোনা সংক্রমিত রোগীর বিদেশযাত্রা বা ফেরার কোনও তথ্য, পরিভাষায় যাকে ‘ট্র্যাভেল হিস্ট্রি’ বলে, তা নেই। তাঁরা কোনও চিহ্নিত করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসেননি, তাঁদের পরিবারের কেউও আক্রান্ত হননি। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে তাঁদের শরীরে রোগ বাসা বাঁধল কী করে? ঠিক এখানেই উঠে আসছে গোষ্ঠী সংক্রমণের তত্ত্ব। এ দিন শনিবারও জেলায় আরও কয়েক জনের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। শনিবার রাত পর্যন্ত স্বাস্থ্য দফতরের হিসেবে নতুন করে ১৪ জনের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
করোনা মোকাবিলার দায়িত্বে থাকা উত্তরবঙ্গের বিশেষ আধিকারিক (ওএসডি) সুশান্ত রায়ের মতে, এখনও গোষ্ঠী সংক্রমণের প্রশ্নই নেই। তিনি বলেন, “গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হলে তো রোগীর সংখ্যা প্রচুর বেড়ে যেত। সামলানোই সমস্যা হত।” তা হলে বাইরে থেকে না ফিরে, করোনা রোগীদের সংস্পর্শে না এসেও এত লোক সংক্রমিত হলেন কী করে? সুশান্ত রায়ের কথায়, “এই রোগ তো বাতাসে ছড়ায় না। কোনওভাবে তাঁরা সংক্রমিত হয়েছেন। মনে রাখতে হবে, এখন যাঁরা সংক্রমিত হচ্ছেন সকলেই উপসর্গহীন। কাজেই কে কখন কার সংস্পর্শে আসছেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। সকলকে সর্তক থাকতে হবে।”
কেন্দ্র গোষ্ঠী সংক্রমণের কথা স্বীকার করেনি, রাজ্য প্রশাসনও একই পথে হাঁটছে। উপসর্গহীনদের পরীক্ষা হবে না বলে নির্দেশিকা এসেছে। ফলে পরীক্ষার সংখ্যাও কমতে পারে বলে আশঙ্কা চিকিৎসকদের একাংশের। গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়ে থাকলেও তা জানা যাবে তো— প্রশ্ন তাঁদের। এক চিকিৎসকের কথায়, “যদি উপসর্গহীনদের পরীক্ষাই না হয়, তা হলে জানা যাবে কী করে কত জন সংক্রমিত? সুতরাং গোষ্ঠী সংক্রমণ হলেও, তা প্রমাণের মতো তথ্য মিলবে না।”
যদিও এই দাবি মানতে চাননি স্বাস্থ্যকর্তারা। তাঁজের দাবি, উপসর্গহীনদের পরীক্ষা কমানোর কথা বলা হয়েছে, পুরোপুরি বন্ধ করার কথা বলা হয়নি। পরিস্থিতির উপরে নজর রয়েছে এবং গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়নি, এখনও করোনা প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে— বলছেন ওঁরা। অন্য দিকে, এ দিন জলপাইগুড়ি কোভিড হাসপাতাল থেকে ২৪ জন ছুটি পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েক জনের বাড়ি ফিরতে সমস্যায় পড়ার অভিযোগ উঠেছে এ দিনও।