ছাত্রীকে নিয়ে গাঢ় ধোঁয়াশা

এ দিন ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেন তাঁরা। সে সময় এলাকার লোকজন তাঁদের জানায়, আরও একাধিক নাবালিকা, তরুণীকে একইভাবে বাইরে পাচার করা হয়েছে। কয়েকজনের নামধামও জানান তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৮ ০২:০৪
Share:

সোমবার উত্তরপ্রদেশে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন। মঙ্গলবার বিডিও অফিসের আধিকারিকদের সামনে হরিয়ানাতে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন বলে জানালেন খড়িবাড়ির নাবালিকার পরিবার। এক মাস ধরে নিখোঁজ ছাত্রীর ব্যাপারে অনুসন্ধানের জন্য মঙ্গলবার তার বাড়িতে গিয়েছিলেন ওই প্রতিনিধিদল।

Advertisement

সেখানে তাঁরা জানতে পারেন তারকনাথ সিঁদুরবালা বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী একা নয়। প্রত্যন্ত খড়িবাড়ির বাঞ্ছাভিটা এবং লাগোয়া এলাকার একাধিক নাবালিকা-তরুণীকে বিয়ের বা কাজের টোপ দিয়ে বাইরে পাচার করা হয়েছে। এ দিন ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেন তাঁরা। সে সময় এলাকার লোকজন তাঁদের জানায়, আরও একাধিক নাবালিকা, তরুণীকে একইভাবে বাইরে পাচার করা হয়েছে। কয়েকজনের নামধামও জানান তাঁরা।

ফেব্রুয়ারি মাসে শেষবার স্কুলে গিয়েছিল ওই ছাত্রী। মাসখানেক ধরে স্কুলে অনুপস্থিত অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রীর খোঁজ করতে সোমবার তার বাড়িতে আসে সহপাঠীরা। তখনই পরিবারের তরফে জানানো হয়, তাঁরা উত্তরপ্রদেশে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু মঙ্গলবার বিন্নাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অঞ্জু ব্যাপারির কাছে তাঁরা জানান, হরিয়ানাতে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। তা নিয়েও সন্দেহ দানা বেঁধেছে। ওই গ্রামে মেয়েটির বিয়ে হয়নি। তার মা এবং এক প্রতিবেশী মহিলা তাকে ভিনরাজ্যে নিয়ে যান। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আলিপুরদুয়ারে যাচ্ছেন বলে তখন জানিয়েছিলেন তাঁরা। বিয়ের কথাও কাউকে জানানো হয়নি। তাতেই ছাত্রীটিকে টাকার বিনিময়ে পাচার করা হয়েছে বলে সন্দেহ গ্রামের মানুষের। ছাত্রীর বাবা জানান, বাড়ির পরিস্থিতি, কী কারণে বিয়ে দিতে হয়েছে বিডিওর প্রতিনিধিদের সমস্তই জানিয়েছি।

Advertisement

বিডিও যোগেশচন্দ্র বর্মন বলেন, ‘‘এ দিন নিখোঁজ ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে কথা বলেন আমার দফতরের লোকজন। কোথায় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন তাঁরা সে সব কিছুই পরিষ্কার নয়। যেখানে বিয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সেখানকার ফোন নম্বর নেওয়া হয়েছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ পরে ছাত্রীটির বাবাকে বিডিও অফিসে ডেকে পাঠানো হয়। নাবালিকাকে যে এ ভাবে যে বিয়ে দেওয়া যায় না তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিডিও বলেন, ‘‘ওই এলাকার আরও কয়েকজন নাবালিকাকে বাইরে পাঠানো হয়েছে বলে তথ্য এসেছে। সমস্তটাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

ব্লক প্রশাসনের তরফে এ দিন বিষয়টি বিস্তারিতভাবে পুলিশকে জানানো হয়।

একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, প্রাথমিক ভাবে আরও পাঁচজন মেয়ের নাম জানা গিয়েছে যাদের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার মধ্যে নাবালিকা ও তরুণী রয়েছে।

এলাকার বাসিন্দাদের কাজে লাগিয়েই এই কাজ করতে সক্রিয় রয়েছে ওই চক্র। গ্রাম স্তরে চাইল্ড প্রোটেকশন কমিটি না-থাকাতে এ ধরনের ঘটনাগুলো আরও আগে চিহ্নিত করতে সমস্যা হচ্ছে।

দার্জিলিং জেলা লিগাল এড ফোরামের সম্পাদক অমিত সরকার জানান, খড়িবাড়ির প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আরও দুই নাবালিকা নিখোঁজ রয়েছে বলে তাঁরা অভিযোগ পেয়েছেন। পুলিশ সুপার অখিলেশ চতুর্বেদী জানিয়েছেন, পুলিশের তরফে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement