— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
অস্ত্রোপচার করে শ্বাসনালির ভিতরে আটকে থাকা জীবন্ত জোঁক বার করে এক মহিলার প্রাণ বাঁচালেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের এক দল চিকিৎসক। শুক্রবার ওই অস্ত্রোপচার করে জোঁকটি বার করা হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। ওই দিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের ‘ইএনটি’র বহির্বিভাগে ওই সমস্যা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন ওই গরুবাথানের বাসিন্দা ওই মহিলা।
কী করে শ্বাসনালিতে জোঁক এল তা ভেবেই পাচ্ছিলেন না বছর চল্লিশের ওই মহিলা। শেষে তাঁর মনে পড়ে যায়, দিন পনেরো আগে, বাড়ির কাছেই একটি পাহাড়ি ঝোরার জল হাতে ধরে খেয়েছিলেন। সম্ভবত, তখনই জলের সঙ্গে জোঁক তাঁর গলায় চলে গিয়েছিল বলেই মনে করছেন চিকিৎসক এবং পরিবারের লোকেরা। ওই ঘটনার পরে তাঁর কাশি হতে থাকে। শ্বাসকষ্ট না হলেও তাঁর মনে হচ্ছিল, গলায় কফ বা কিছু আটকে রয়েছে।
সমস্যা বাড়ছে দেখে প্রথমে গরুবাথান স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দেখান তিনি। ৩১ জানুয়ারি সেখানে ভর্তি হন। সেখানেই থাইরয়েড, প্রস্রাবের পরীক্ষা করানো হয়। কিন্তু সমস্যা বাড়ছে দেখে, রোগীকে ২ ফেব্রুয়ারি শিলিগুড়িতে চিকিৎসকের চেম্বারে নিয়ে দেখান পরিবারের লোকজন। সেখানেই জানা যায়, একটি জোঁক আটকে রয়েছে তাঁর শ্বাসনালিতে। চিকিৎসক অস্ত্রোপচারের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে বলেন। শুক্রবার বহির্বিভাগে গেলে, চিকিৎসকেরা দেখে ভর্তি করে নেন। সন্ধ্যায় অস্ত্রোপচার করেন।
ইএনটি বিভাগের প্রধান রাধেশ্যাম মাহাতো জানান, তাড়াতাড়ি রোগীকে ‘ওটি’-তে নেওয়ার ব্যবস্থা হয়। মহিলার উপরের শ্বাসনালিতে জোঁকটি ছিল। তাই ‘ট্র্যাকিয়োস্টোমি’ করে বিকল্প শ্বাসপথের ব্যবস্থা করা হয়। কারণ, বার করার সময় টানাটানিতে জোঁকটি ভিতরে চলে যাওয়ার বা রক্তক্ষরণের আশঙ্কা থাকে। সেটা ফুসফুসে চলে গেলে, রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই শ্বাসনালিকে ‘সিল’ করা হয়। এর পরে, ‘এন্ডোস্কোপ’ দিয়ে জ্যান্ত জোঁকটি বার করা হয়। সেটিতে রোগীর পরিবারের হাতে তুলে দিয়ে না মেরে ছেড়ে দিতে বলা হয়। ‘ট্র্যাকিয়োস্টোমি’ দু’-এক দিনে খোলা হবে।
বিভাগীয় প্রধান ছাড়া গৌতম দাস, সৌমেন্দু ভৌমিক, তুহিন শাসমল, আজাহারউদ্দিন, সন্দীপ মণ্ডল, অজিতাভ সরকারের মতো এক দল চিকিৎসক ছিলেন। ধ্রুপদ রায়, শুভম গুপ্ত, শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়দের মতো প্রবীণ চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে বলা হয়। অ্যানাস্থেসিস্ট ধর্মরাজ এবং অন্যেরা ছিলেন।
চিকিৎসকেরা জানান, শ্বাসনালি থেকে রক্ত খেয়ে জোঁকটি ফুসফুসে চলে যেতে পারত। সেখানে চলে গেলে, তাকে বার করার সরঞ্জাম এই মেডিক্যালে নেই। তখন মহিলাকে অন্যত্র পাঠাতে হত। জটিল পরিস্থিতি তৈরি হত। রাধেশ্যাম মাহাতো বলেন, ‘‘এর আগে, ২০২২ সালে ডিসেম্বরে কালিম্পঙের ৪৮ বছরের এক ব্যক্তি একই সমস্যা নিয়ে এসেছিলেন। পাহাড়ে জল সরবরাহের পাইপে মুখ দিয়ে টেনে জল খেতে গিয়ে জোঁক চলে যায় শ্বাসনালিতে। সে ক্ষেত্রেও বার করা হয়।’’
রোগিণীর স্বামী নবীন রাই এ দিন বলেন, ‘‘এই হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে ঋণী হয়ে রইলাম। স্ত্রীয়ের গলায় যে জোঁক ঢুকে যেতে পারে, ভাবতেই পারিনি। স্ত্রী এখন ভালই রয়েছে।’’