Jalpaiguri

অস্থায়ী শিক্ষক চায় স্কুল, ‘বাধা’ চাকরিহারাদের

এই পরিস্থিতিতে অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে স্কুলগুলি এক পা পিছিয়ে গিয়েছে। তার ফলে ব্রাত্য থেকেছে ক্লাস। চিন্তা বেড়েছে অভিভাবকদের।

Advertisement

অনির্বাণ রায় , নীতেশ বর্মণ

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:২২
Share:
স্কুলে পঠনপাঠন। নকশালবাড়ির হাতিধিয়ায়।

স্কুলে পঠনপাঠন। নকশালবাড়ির হাতিধিয়ায়। —ফাইল চিত্র।

শিক্ষক সমস্যা রয়েছে, সমাধানের একটি পথও মিলেছে, কিন্তু সে পথে হাঁটার উপায় নেই। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শিক্ষক হারানো জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ির অনেক স্কুলের পরিস্থিতি এখন অনেকটা এমনই।

Advertisement

চাকরিহারা শিক্ষকদের বিকল্প কী, তা খুঁজতে হয়রান স্কুলগুলি। তার জেরে জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ির শতাধিক স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকের পঠনপাঠন কার্যত থমকে গিয়েছে। দ্বাদশ শ্রেণির পড়াশোনা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে দাবি শিক্ষকদের একাংশের। কোনও স্কুলে রসায়নের শিক্ষক নেই, কোথাও ইংরেজি, অঙ্ক, সংস্কৃতের। সেখানে এই সব বিষয়ের ক্লাস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে রয়েছে। সমাধান খুঁজতে একাধিক স্কুল অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের ভাবনাচিন্তা করছে। কিন্তু তাতে ‘বাধা’ দিচ্ছেন সদ্য চাকরিহারারা।

শিলিগুড়ির একটি স্কুলে অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের আলোচনা শুরু হতেই ওই স্কুলের তিন চাকরিহারা শিক্ষক এসে প্রধান শিক্ষককে বলে গিয়েছেন, অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ হলে তাঁরা স্কুলের দুয়ারে অবস্থানে বসবেন। জলপাইগুড়ির একটি স্কুলে পরিচালন সমিতির বৈঠক ছিল, সেখানে অস্থায়ী নিয়োগ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই রাতেই চাকরিহারারা পরিচালন সমিতির সভাপতির বাড়িতে গিয়ে কার্যত দাবি জানিয়ে এসেছেন, নিয়োগ নিয়ে আইন জটিলতা না-কাটা পর্যন্ত অস্থায়ী কোনও নিয়োগ নয়। এই পরিস্থিতিতে অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে স্কুলগুলি এক পা পিছিয়ে গিয়েছে। তার ফলে ব্রাত্য থেকেছে ক্লাস। চিন্তা বেড়েছে অভিভাবকদের।

Advertisement

জলপাইগুড়ির একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “অস্থায়ী নিয়োগ নিয়ে চাকরিহারাদের দাবি অযৌক্তিক বলা যায় না। যদি অস্থায়ী নিয়োগ হয় এবং চাকরিহারাদের চাকরি ফিরে পাওয়ার আইনি পথ বার না হয়, তবে তো ছেলে-মেয়েগুলোর আমও যাবে বস্তাও যাবে।”

অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ ছাড়া পথও নেই বলে দাবি করছেন অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষই। যে সব শিক্ষকেরা মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াচ্ছেন তাঁদের দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের ক্লাস করানো হোক, এমন প্রস্তাব রয়েছে। যদিও পাঠ্যক্রমের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষকদের বড় অংশ নিজেরাই চাইছেন না উচ্চ মাধ্যমিকের ক্লাস করাতে। পার্শ্ব-শিক্ষকদের দিয়েও ক্লাস নেওয়ার কথা উঠে এসেছে। সে ক্ষেত্রে এক-দু’টি স্কুলের দুই-এক জন ছাড়া পার্শ্ব-শিক্ষকদের পক্ষেও উচ্চ মাধ্যমিকের ক্লাস নেওয়া সম্ভব নয় বলে দাবি। শুধু উচ্চ মাধ্যমিক নয়, সঙ্কট রয়েছে মাধ্যমিকের ক্লাসেও। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে জলপাইগুড়ির অরবিন্দ মাধ্যমিক (উচ্চমাধ্যমিক) স্কুলে অঙ্কের শিক্ষক থাকলেন এক জন। এক জনকে দিয়ে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত অঙ্কের ক্লাস নেওয়া অসম্ভব বলে দাবি।

তা হলে উপায়?

স্কুলের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে অস্থায়ী নিয়োগ ছাড়া উপায় নেই বলেই মনে করছেন বড অংশের শিক্ষক এবং শিক্ষাবিদেরা। শিলিগুড়িুর বিধাননগরের মুরালিগছ স্কুলের প্রধান শিক্ষক সামসুল আলম স্পষ্টই বললেন, “ক্লাস চালিয়ে যেতে অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ জরুরি হয়ে পড়েছে। তাতে বাধা দেওয়া ঠিক নয়। না হলে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে।’’

যদিও প্রায় সব স্কুলেই চাকরিহারাদের ‘চাপ’ বেড়েছে অস্থায়ী নিয়োগের বিরুদ্ধে। স্কুল কর্তৃপক্ষ তাই প্রস্তাব থাকলেও সমাধানের পথে হাঁটতে দ্বিধাগ্রস্ত। জলপাইগুড়ির একটি পরিচিত স্কুলের অভিভাবক দীপঙ্কর চক্রবর্তী বললেন, “আমার মেয়ে দ্বাদশ শ্রেণিতে উঠল। দু’টি বিষয়ের ক্লাস বন্ধ। ওর ভবিষ্যৎ কী হবে কে উত্তর দেবে, দায় কার?”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement