বামনগোলায় বৃদ্ধ বিজেপি কর্মীকে খুনের অভিযোগে ধৃত পুত্র ও পুত্রবধূকে নিয়ে আসা হল মালদহ জেলা আদালতে। ছবি: স্বরূপ সাহা
মালদহে বিজেপি কর্মীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় খুনের মামলা রুজু করে মৃতের ছেলে ও পুত্রবধূকে গ্রেফতার করল পুলিশ। সোমবার মালদহ জেলা আদালতে হাজির করানো হলে আদালতের নির্দেশে তাঁদের তিন দিন হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ। এ দিন পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে বিজেপির উত্তর মালদহের সাংসদ খগেন মুর্মু, বিধায়ক জোয়েল মুর্মুর নেতৃত্বে ফের ঘেরাও আন্দোলনে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বামনগোলার নালাগোলা। অভিযোগ, সাংসদ, বিধায়কেরা হাজির থাকলেও, পুলিশ ফাঁড়িতে ভাঙচুর চালান বিজেপির মহিলা কর্মী, সমর্থকেরা। তৃণমূল কর্মী সন্দেহে এক যুবককে মারধরেরও অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে মোতায়ন করা হয় কেন্দ্রীয় বাহিনী।
রবিবার সকালে শোওয়ার ঘর থেকে বামনগোলার মদনাবতী গ্রাম পঞ্চায়েতের কিয়ানদিঘি গ্রামের বাসিন্দা বুড়ন মুর্মু (৬০)-র ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। তাঁকে খুনের অভিযোগে তাঁরই ছেলে বিপ্লব মুর্মু ও তৃণমূল প্রার্থী বৌমা শর্মিলা মার্ডির নামে থানায় অভিযোগ করেন মৃতের বৌদি লক্ষ্মী মুর্মু। তিনি ছেলে, বৌমার পাশাপাশি তিন তৃণমূল নেতারও নামে অভিযোগ করেন। পুলিশ বিপ্লব ও তাঁর স্ত্রী শর্মিলাকে রবিবার রাতে ধ রে।
পুলিশ জানায়, খুন, ষড়যন্ত্র, দলগত অপরাধের মতো ধারায় মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। মালদহ মেডিক্যালে বুড়নের দেহের ময়না-তদন্ত হয়েছে। বুড়নের শরীরে আঘাতের কোনও চিহ্ন মেলেনি, প্রাথমিক তদন্তে দাবি পুলিশের। পুলিশ জানিয়েছে, জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বাবা ও ছেলের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। তবে তাঁকে খুন করা হয়েছে, না তিনি আত্মহত্যা করেছেন তা ময়না-তদন্তের রিপোর্ট মেলার পরেই স্পষ্ট হবে। মালদহের পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, “এক আত্মীয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে মৃতের ছেলে ও বৌমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” বাবাকে খুনের অভিযোগ অস্বীকার করে ধৃত বিপ্লব মুর্মু বলেন, “জমি নিয়ে বাবার সঙ্গে হাতাহাতি হয়েছিল ঠিকই। তবে বাবাকে আমরা খুন করেনি। আমাদের ফাঁসানো হচ্ছে।”
এ দিনও বিজেপির নেতা, কর্মীরা ঝাঁটা হাতে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। নালাগোলা ফাঁড়িতে ভাঙচুরও চালানো হয় বলে অভিযোগ। সাংসদ খগেন মুর্মুর দাবি, “ছেলে, বৌমাকে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় কিছু তৃণমূল নেতা আমাদের দলের কর্মী বুড়ন মুর্মুকে খুন করেছে। অথচ, পুলিশ তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতার করেনি। তারই প্রতিবাদে পথে নেমেছি।” তিনি আরও বলেন, ‘‘শুধু বামনগোলায় নয়, রাজ্য জুড়ে হিংসার ঘটনা ঘটছে। জরুরি ভিত্তিতে রাজ্যে ৩৫৫ ধারা জারি করা উচিত।’’ বিজেপির আন্দোলনকে কটাক্ষ করে পাল্টা আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে তৃণমূলও। তৃণমূলের বামনগোলা ব্লকের সভাপতি অশোক সরকার বলেন, “বামনগোলা ব্লকে হেরে গিয়ে পারিবারিক গোলমালকে বিজেপি রাজনৈতিক রং লাগিয়ে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের দলের নেতাদের নাম জড়ানো হচ্ছে। বিজেপির নোংরা রাজনীতির বিরুদ্ধে আমরা পাল্টা পথে নামব।”