ভোট-যুদ্ধের ছবিটা কেমন, এত দিনে বুঝতে পারছে পাহাড়।
এখানে শাসকদল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করার কায়দাটাও শিখে ফেলেছেন পাহাড়ের বিরোধীরা। মনোনয়নপত্র ভরা, ‘ডামি’ বা গোঁজ প্রার্থীর ব্যবস্থা করা বা বিরুদ্ধপক্ষের আবেদনের খুঁত ধরে তা বাতিল করা, এ বারের ভোটে শিখছে পাহাড়। সৌজন্যে, সমতলের একঝাঁক নেতা-মন্ত্রী। যাঁদের কয়েক জন বলেছেন, ‘‘সেই সুবাস ঘিসিঙ্গের আমল থেকে বিধানসভা ভোটই হোক বা পুরভোট, সবই পাহাড়ে এত দিন একতরফা হয়েছে। তাই ভোটে লড়ার আদব-কায়দা বিরোধীদের অনেকেই জানেন না।’’ হাতেকলমে তা শিখিয়ে পাহাড়ের মানুষকে ভোটের ময়দানে নামাতে হচ্ছে। কাজটা সহজ নয়, মানছেন পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, এসজেডিএ-এর চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী বা আলিপুরদুয়ারের জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোহন শর্মা। ওই চার জন যথাক্রমে দার্জিলিং, কার্শিয়াং, মিরিক ও কালিম্পঙের পুরভোটে দলের দায়িত্বে রয়েছেন।
কেমন অভিজ্ঞতা তাঁদের? মনোনয়নপত্র তোলার সময় সম্ভাব্য প্রার্থীর কাণ্ড দেখে আর ঝুঁকি নিতে চাননি সৌরভবাবু। মনোনয়ন জমার দিনে জলপাইগুড়ি থেকে একাধিক আইনজীবী নিয়ে গিয়েছেন। মিরিকে মোর্চার সম্ভাব্য চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর আবেদনে খুঁত ধরে আপত্তি তোলায় সেই মনোনয়ন বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন। গৌতমবাবু আবার শুরু থেকেই সমতলের ভোট-অভিজ্ঞদের নিয়ে টিম বানিয়েছেন। তৃণমূলের পাহাড়ের সভাপতি রাজেন মুখিয়া বলেন, ‘‘এত দিন তো পাহাড়ে ভোটই হতো না। লোকে এ সব জানবে কী করে!’’ এ কথা মেনে নিয়ে পাহাড়ের অনেকেই বলছেন, সব জমানাতেই এক অবস্থা। ঘিসিঙ্গের আমলে বিরোধী পক্ষকে খুঁজে পাওয়া যেত না। মোর্চার আমলেও সেই ছবি বদলায়নি। গুরুঙ্গদের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার পরে গোর্খা লিগের সভাপতি মদন তামাঙ্গকে সাতসকালে দার্জিলিঙে রাস্তায় খুন করা হয়।
পাহাড়ে তৃণমূল-জিএনএলএফের মিটিং-মিছিলে ভিড় দেখে ম্যালের হকাররা হা করে তাকিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকেই বলছেন, ‘‘শিলিগুড়ি-কলকাতার মতো পাহাড়েও হাড্ডাহাড্ডি ভোট শুরু হয়ে গেল।’’ তাই দস্তুরমতো ঘাম ছোটাতে হচ্ছে বিমল গুরুঙ্গকে। তাঁর লক্ষ্য, এলাকায় যাতে বেশি ধস না নামে। কারণ, কিছু দিন পরেই জিটিএ ভোট। তাই প্রতিটি সভায় গুরুঙ্গকে বলতে হচ্ছে, ‘‘সমতলের নেতা-মন্ত্রীরা বেড়াতে আসেন। আমরা সারা বছর থাকি। আমাদের উপরেই পাহাড়বাসীর ভরসা রয়েছে তা ফের প্রমাণ হবে।’’ কিন্তু ভোট-যুদ্ধের স্বাদ পাওয়া পাহাড়বাসী কী করবেন, সেটা আপাতত কুয়াশার আড়ালেই।