বেপরোয়া: হেলমেট ছাড়াই পিছনে আরোহী নিয়ে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েতে ছুটছে বাইক। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
‘নিয়ম না মানা পায়ে বেড়ি পরাবে কে’?
পুলিশের দাবি, ‘ধরতে গেলে হয় আমাদের বিপদ হবে, আর না হলে যাঁকে ধরার চেষ্টা করব তাঁর বিপদ হবে’। আর সাধারণ মানুষ তিতিবিরক্ত হয়ে বলছেন, ‘কত বারই বা আমরা বারণ করব? আর এ কাজের দায়িত্বও তো আমাদের নয়।’
প্রশাসন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের এই দাবি, পাল্টা দাবির মধ্যেই বহাল তবিয়তে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন একদল তরুণ-তরুণী। বিকট আওয়াজ তুলে, ধোঁয়া ছড়িয়ে চোখের নিমেষে ছুটে চলেছে তাঁদের মোটরবাইক। কারও মাথাতেই হেলমেটের বালাই নেই। উল্টে চালকের পিছনের সওয়ারি মর্জিমতো উঠে দাঁড়িয়ে পড়ছেন বাইকের সিটের উপর। কেউ আবার বাইকের সাইড স্ট্যান্ডটি পিচের রাস্তায় ঘষে তা থেকে আগুন বের করছেন।
মোটরবাইক নিয়ে এমন রেসের ছবি এক দিনের নয়। প্রতি দিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত এটাই চেনা ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয়দের কাছে। তাঁদের অভিযোগ, ছ’নম্বর জাতীয় সড়কে ফেরারি দুর্ঘটনার পরে পুলিশি কড়াকড়িতে ওই রাস্তা-সহ, দুই নম্বর জাতীয় সড়ক, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে আপাতত বন্ধ হয়েছে গাড়ির রেস। আর সেই জায়গায় এখন কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে এবং বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে বাইক রেসের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে।
গত ২৫ জুন সন্ধ্যায় এমনই বাইকের রেস চলছিল কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের উপরে ফতুল্লাপুর এলাকায়। স্থানীয়েরা জানান, বাইকের বিকট শব্দ ও ঝড়ের গতিতে এঁকেবেঁকে চলার ফলে ভয় পেয়ে এক বৃদ্ধ পথচারী রাস্তায় ছিটকে পড়েন। হাতে-পায়ে চোটও লাগে তাঁর। এর পরেই স্থানীয়েরা তাড়া করেন বাইকগুলিকে। বাইক-সহ এক বাইকচালককে ধরে ফেললেও বাকিরা পালিয়ে যায়। ক্ষিপ্ত জনতা আগুন ধরিয়ে দেয় ওই মোটরবাইটিতে। রাস্তা
অবরোধও হয়। পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দিলেও ছবিটা যে এখনও বদলায়নি, তেমনই অভিযোগ বাসিন্দাদের। তাঁদের আরও অভিযোগ, এক্সপ্রেসওয়ের ধারে যে ধাবা রয়েছে সেখানেই প্রতিদিন বিকেল থেকে এসে জড়ো হন ওই তরুণ-তরুণীরা। সঙ্গে থাকে দামি সব বাইক। ধাবায় চা, খাবার খেয়ে তার পরেই শুরু হয় বাইক রেস। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ফতুল্লাপুর থেকে শুরু করে মুড়াগাছা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তায় ছোটে বেপরোয়া বাইকগুলি।
সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েতে গিয়ে দেখা গেল নিয়ম না-মানা বাইকের দাপাদাপি। কারও মাথাতেই নেই হেলমেট। বাইকের সাইলেন্সার পাইপের বিকট শব্দে চাপা পড়ছে অন্য গাড়ির হর্ন। এমনিতেই কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের উপরে খুব বেশি আলো নেই। ফলে অন্ধকার ফুঁড়েই মাঝেমধ্যে ধেয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে বাইকগুলিকে। তবে তাঁদের আটকানোর জন্য চোখে পড়েনি পুলিশের টহলদারিও। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, অনেকেই আবার বাইকের সাইড স্ট্যান্ডের নীচে স্টিলের পাত লাগিয়ে রাখেন। যাতে সেটি পিচ রাস্তায় ঘষে আগুন ছিটকতে পারে। কেউ আবার চোখের নিমেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে বাইক থেকেই রাস্তায় বিপজ্জনক ভাবে পানীয়ের ফাঁকা বোতল এ দিক সে দিক ছুঁড়ে ফেলেন বলে অভিযোগ।
বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, মাঝেমধ্যে একই ছবি বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতেও দেখা যায়। সেখানে রাস্তার ধারেই রয়েছে একাধিক ছোটখাটো দোকান। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, সন্ধ্যা নামলেই বাইকের পাশাপাশি দামি গাড়ি নিয়েও অনেকে এসে হাজির হন ওই সব দোকানে। খাওয়াদাওয়া শেষে শুরু হয় ‘দৌড় পর্ব’।
যেখানে রাজ্য জুড়ে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ এর প্রচার চলছে, সেখানে ট্র্যাফিক নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কী ভাবে চলছে এই ‘মারণ-দৌড়’?
স্থানীয় থানার আধিকারিকদের দাবি, বেপরোয়া গতির ওই সব বাইককে আটকাতে গেলে পুলিশকর্মীদের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। আবার পুলিশের ভয়ে আরও গতি বাড়িয়ে পালাতে গিয়ে বাইকটিও ছিটকে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যদিও বিষয়টি জানা নেই বলে দাবি ব্যারাকপুরের ডিসি (ট্র্যাফিক) জবি থমাসের। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি জানতাম না। তবে এটা কখনওই চলতে দেওয়া যায় না। কড়া পদক্ষেপ করার ব্যবস্থা করছি।’’