পুলিশের দফতর থেকে বেরোচ্ছেন রাহুল। — নিজস্ব চিত্র
ঘটনার ঠিক পরেই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছিল লালবাজার। এ বার ঘুষ-কাণ্ডে লালবাজারের তত্ত্বে সিলমোহর দিল নবান্নও। নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া ওই ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত রিপোর্টে জানিয়ে দেওয়া হল— পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার তো নয়ই, ঘটনার সঙ্গে লালবাজারের কোনও শীর্ষকর্তারই যোগ নেই।
গত ২৮ মার্চ দলীয় দফতরে বিজেপি নেতা রাহুল সিংহকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে ধরা হয় কলকাতা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের এএসআই শুভাশিস রায়চৌধুরী এবং কনস্টেবল আমিনুল রহমানকে। বিজেপি নেতাদের অভিযোগ, গরু পাচারে সাহায্য করার জন্য রাহুল সিংহকে ঘুষ দিতে চান ওই দুই পুলিশকর্মী। তাঁদের জোড়াসাঁকো থানার হাতে তুলে দেওয়া হয়। এর পরেই জল্পনা শুরু হয়, কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের সম্মতি ছাড়া স্পেশাল ব্রাঞ্চের কোনও কর্মী এই কাজ করার সাহস পাবেন না। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ কমিশনারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিজেপি কলকাতা পুলিশে ইউনিয়ন গড়তে চেষ্টা করছিল। বলা হয়েছিল, সেই ইউনিয়নের সদস্য হলে সীমান্তে পোস্টিং করিয়ে দেওয়া হবে। সে সব কারণেও অন্য গোষ্ঠীর কেউ এমন কাণ্ড করতে পারে। সন্ধ্যায় অবশ্য ওই বয়ান বদলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়— গরু পাচারের পারিবারিক কারবারে সাহায্য চাইতেই ওই দু’জন রাহুলবাবুর কাছে যান। তবে এর পরে রাজ্যের বিরোধী দলগুলি নির্বাচন কমিশনের কাছে পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে সরানোর দাবি তোলে।
দিন দুই আগে কার্যত লালবাজারের মতকে সিলমোহর দিয়েই কমিশনের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েছে নবান্ন। মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাঠানো ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত করা হয়েছে। কোনও পুলিশ-কর্তার জড়িত থাকার প্রমাণ তাতে মেলেনি। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা জানান, ‘‘রিপোর্টে বলা হয়েছে, দুই পুলিশকর্মী একেবারেই ব্যক্তিগত কাজে বিজেপির দফতরে গিয়েছিলেন। এর সঙ্গে কলকাতা পুলিশের কোনও সম্পর্ক নেই।’’ এ দিন রাহুলবাবু বলেন, ‘‘পুলিশ তদন্তের নামে চক্রান্তকারীকে বাঁচাতে চাইছে।’’
ঘটনাচক্রে বুধবারই বিজেপি নেতা রাহুল সিংহকে ডেকে তাঁর বিবৃতি রেকর্ড করেছে কলকাতা পুলিশ। প্রশ্ন উঠেছে, রাহুল সিংহের বিবৃতি ছাড়াই কী ভাবে কমিশনকে তদন্তের বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠাল রাজ্য সরকার? রাজ্য প্রশাসনের ওই কর্তা বলেন, ‘‘কমিশন প্রথমে দু’দিনের মাথায় প্রাথমিক রিপোর্ট চেয়েছিল। তার পরে বিস্তারিত রিপোর্ট কবে পাঠাতে হবে, তার দিন ক্ষণও ঠিক করে দিয়েছিল। তার মধ্যে যতটুকু তদন্ত হয়েছে, তারই রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। পরে কমিশন চাইলে ফের রিপোর্ট পাঠানো হবে।’’