বর্ধমান স্টেশনের নাম পরিবর্তনের কোনও প্রস্তাব তাদের সামনে নেই বলেই জানাল রেল মন্ত্রক। মাসখানেক আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই অবশ্য জানিয়েছিলেন, ওই স্টেশনের নাম বদলে বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের নামে করা হবে।
রেল মন্ত্রকের তরফে আজ বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, দেশের কোনও রেলস্টেশনের নাম বদলানোর অধিকার একমাত্র কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকেরই রয়েছে। রাজ্য সরকারের সুপারিশ এলে রেল মন্ত্রক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক, সার্ভেয়র জেনারেল অব ইন্ডিয়া ও ডাক বিভাগের থেকে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ (এনওসি) নিয়ে তারা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করে। তবে বর্ধমান রেলস্টেশনের নাম বদলের ব্যাপারে এনওসি চেয়ে এমন কোনও অনুরোধ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক পাঠায়নি। কিছু দিন আগে অবশ্য পটনায় বটুকেশ্বর দত্তের বাড়ি গিয়ে রাই জানিয়েছিলেন, বিপ্লবীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বর্ধমান স্টেশনের নাম বদলে বিপ্লবীর নামে করা হবে। দিল্লিতে জাতীয় আইন পরিষদে বোমা মারার পরে ফাঁসি হয়েছিল ভগৎ সিংহের, বটুকেশ্বর দত্তের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আন্দামানের জেল থেকে মুক্তির পরে তিনি পটনার বাড়িতেই ছিলেন।
২০১২ সাল থেকেই বর্ধমান স্টেশনের নাম পরিবর্তনের জন্যে দাবি জানাচ্ছে খণ্ডঘোষের ওঁয়ারি গ্রামের বটুকেশ্বর দত্ত স্মৃতি রক্ষা কমিটি। এ দিন কমিটির তরফে গবেষক সর্বজিৎ যশের মন্তব্য, “স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে বিপ্লবীকে সম্মান জানানো যেত। তবে নামে কি কিছু যায় আসে! আমরা জায়গার নাম ধরেই যাতায়াত করি—এমন উদাহরণ প্রচুর রয়েছে।’’ তিনি জানান, ওই গ্রামে ভগৎ সিংহের সঙ্গে ১৫ দিন আত্মগোপন করার পরে বোঁয়াইচণ্ডী স্টেশনের ছোটরেল ধরে পালিয়েছিলেন বটুকেশ্বর দত্ত। বিপ্লবীর মেয়ে ভারতী দত্ত বাগচী বলেন, “কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে কী কথা হয়েছে, আমার জানা নেই। কেন্দ্র সরকারের ঘোষণাও আমি শুনিনি। সে জন্যে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’
বর্ধমান জৈন মাইনরিটি কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সম্পাদক রাজ সিংহ ভুতুরিয়া বলেন, “বর্ধমান নামের সঙ্গে জৈন ধর্মের ২৪তম তীর্থঙ্কর মহাবীরের নাম জড়িয়ে রয়েছে। পাঁচ হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে চাইছিল রেল। সে জন্যে আমরা কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকারের সমস্ত স্তরে প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। সবার মিলিত চেষ্টার জন্যেই কেন্দ্র সরকার নাম পরিবর্তন করার দিকে এগোতে পারল না।’’ জানা গিয়েছে, দু’দিন আগে দিল্লির জৈন সম্প্রদায়ের কয়েক জন রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের সম্প্রদায়ের সঙ্গে বর্ধমান নামের যোগ কী, তার কিছু নথিপত্র দেন। ওই প্রতিনিধি দলকেই রেলমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, স্টেশনের নাম বর্ধমান-ই থাকবে।