কদর কমছে শোলার, চিন্তায় বনকাপাশি

থিমের পুজোর বাড়বাড়ন্তে চিন্তার ভাঁজ বনকাপাশি গ্রামের ঘরে-ঘরে। উৎসবের মরসুমে মেলা কাজের উপরে নির্ভর করেই সংসার চলে। শোধ করতে হয় মহাজনের ঋণও।

Advertisement

অশোক সেনগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৫ ০১:৫৯
Share:

মণ্ডপসজ্জার জন্য শোলার উপকরণ বানানো চলছে।—ফাইল চিত্র।

থিমের পুজোর বাড়বাড়ন্তে চিন্তার ভাঁজ বনকাপাশি গ্রামের ঘরে-ঘরে। উৎসবের মরসুমে মেলা কাজের উপরে নির্ভর করেই সংসার চলে। শোধ করতে হয় মহাজনের ঋণও। কিন্তু শোলার কাজের যথেষ্ট বরাত না পেলে কী করে চলবে, সে নিয়েই উদ্বেগ বেড়েছে বর্ধমানের এই গ্রামের শিল্পীদের।

Advertisement

কাটোয়া স্টেশন থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে মঙ্গলকোট থানা এলাকার মধ্যে পড়ে এই বনকাপাশি। দীর্ঘ দিন ধরে শোলা শিল্পের জন্য বিখ্যাত এই গ্রাম। পুজোর ক’মাস আগে থেকে ঘরে-ঘরে শুরু হয়ে যায় ব্যস্ততা। পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে শোলার সাজ তৈরিতে হাত লাগান। হস্তশিল্পে পারদর্শিতার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্যের বেশ কিছু স্বীকৃতিও মিলেছে। গ্রামের শিল্পীরা জানান, থিমের পুজোর প্রচলন যত বেড়েছে, মণ্ডপে প্লাস্টার অব প্যারিস, থার্মোকোলের মতো জিনিসের ব্যবহার বাড়ছে। আর তাতে বরাত কমছে শোলাশিল্পের। বনকাপাসির উত্তরপাড়ার প্রসাদ ঘোষের কথায়, ‘‘এ রকম চলতে থাকলে তো সমস্যার! মহাজনের কাছে তিন লক্ষ টাকা আগেই ধার ছিল। এ বার আরও দু’লক্ষ টাকা নিতে হয়েছে। মাসে ৪ শতাংশ সুদ। শোধ করতে হবে।’’

বিয়ের পরে বনকাপাশির শ্বশুরবাড়িতে পা দিয়েই শোলাশিল্পে হাত লাগিয়েছিলেন নিগন গ্রামের কমলা, বন্ডুল গ্রামের স্বপ্নার মতো অনেকেই। বুদ্ধদেব-বাসন্তী, অশোক-রিনা— ঘরে ঘরে দম্পতিরা অভিজ্ঞ হাতে শোলার পাতায় বা দণ্ডে ফুটিয়ে তোলেন কারুকাজ। তাঁদের বাবা-মা, ছেলেমেয়েরাও কখনও-সখনও সেই কাজে হাত লাগান। গত শতকে মৃত্যুঞ্জয় মালাকার, গোবিন্দচন্দ্র ঘোষের মতো শিল্পীরা এই গ্রামে যে ঘরানার পত্তন করে স্বীকৃতি পান, উত্তরসূরিরা যত্ন নিয়ে তা বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রসাদবাবু বলেন, ‘‘আমার বাবা গোবিন্দ ঘোষ ১৯৭৮-এ সেরা শোলাশিল্পী হিসেবে রাজ্যের পুরস্কার পান। মৃত্যুঞ্জয়বাবু এবং তাঁর স্ত্রী কাত্যায়নী জাতীয় পুরস্কার পান।’’

Advertisement

শোলাচাষের জন্য বিখ্যাত মূলত নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলা। বীরভূম ও বর্ধমানের কিছু অংশেও শোলাচাষ হয়। এ সব শোলার পাশাপাশি কলকাতার হাট থেকেও শোলা কেনেন বনকাপাশির শিল্পীরা। কলকাতা-সহ রাজ্যের নানা অঞ্চলের বিভিন্ন পুজোয় প্রতিমা এবং মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহৃত হয় এই সব শোলার কাজ। শুধু দুর্গাপুজো নয়, কালীপুজো, জগদ্ধাত্রীপুজোর দিকেও তাই তাকিয়ে থাকে বনকাপাশি। বছরে কত টাকার শোলার কাজ হয়? ‘‘তা প্রায় দেড় কোটি তো হবেই’’, বলেন স্বপন ভট্টাচার্য।

তবে থিমের বাজারে শোলার কাজের চাহিদা কমছে বলে দাবি শিল্পীদের। তাঁদের আশঙ্কা, কাজও না কমে যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement