কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র
দূষণ নিয়ন্ত্রণের নির্দিষ্ট বিধিনিষেধ না মানা পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজকর্ম— এমনটাই নির্দেশ দিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। যদিও পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ বণ্টন নিগম কর্তৃপক্ষের দাবি, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রাখতে বলা হয়নি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দূষণ নিয়ন্ত্রণে কিছু পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে।
পরিবেশ দফতর সূত্রের খবর, সুব্রত মুখোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তির করা মামলার প্রেক্ষিতে দিন কয়েক আগে এই নির্দেশ দেয় পরিবেশ আদালত বা ‘ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনালে’র পূর্বাঞ্চলীয় বেঞ্চ। সালফার-নাইট্রোজেন গ্যাসের দূষণ কমানোর প্রযুক্তি চালুর কথা বলেছিল আদালত। কিন্তু সেই কাজ এখনও শুরু করেনি কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। তাতেই রুষ্ট ডিভিশন বেঞ্চ। বস্তুত, আগেও কোলাঘাট ও বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মারাত্মক দূষণের অভিযোগ উঠেছিল। কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পরিবেশ আদালতে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে। আমরা দূষণ নিয়ন্ত্রণে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি। কিছু কাজ বাকি আছে। পরিবেশ আদালত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে শুনেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখছেন।’’
রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রাখতে বলা হয়নি। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণ কমাতে যা যা ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে, সেগুলি সম্পর্কে কী পদক্ষেপ করা হবে তা ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে হলফনামা দিয়ে জানাতে বলা হয়েছে। নিগমের এক কর্তা জানান, যে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে সেগুলি ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে নিতে হবে। দূষণ কমাতে দেশের সব তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য এটাই নির্দেশ। ওই কর্তা আরও জানান, কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র অনেক পুরনো। অনেকগুলি ইউনিটের বয়স প্রায় ৩৩ বছর পেরিয়েছে। সেখানে পুরনো ইউনিট বন্ধ করে নতুন ইউনিট বসানো হবে, নাকি পুরনোগুলিতেই দূষণ কমানোর ব্যবস্থা করা হবে তা সরকারি স্তরে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পরিবেশ দফতরের এক সূত্রে খবর, কোলাঘাট কেন্দ্রে ভাসমান ধূলিকণা এবং বর্জ্য জলের সমস্যা নেই। কিন্তু আদালতের নির্দেশে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের যৌথ দল পরিদর্শন করে যে রিপোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে জমা দিয়েছিল,
তাতে ওই গ্যাসীয় দূষণ রোখার প্রযুক্তি বসানোর কাজ শুরুই হয়নি
বলে জানানো হয়। পরিবেশবিদদের কেউ কেউ বলছেন, এখন বর্ষা চলছে। তাতে প্রাকৃতিক ভাবেই
বাতাস পরিস্রুত হয়। তাই বর্তমানে সমস্যা তেমন নেই। যদিও পরিবেশবিদদেরই একাংশের মত, আদালত কড়া নির্দেশ না-দিলে বহু সরকারি সংস্থা গড়িমসি করে। তাই এমন নির্দেশ জরুরি ছিল।