প্রেমিকের মোটরবাইক চেপে ধাঁ সদ্য বিবাহিতা

শ্বশুরমশাই ভেবেছিলেন, তাঁরই চোখের সামনে দিয়ে নতুন বৌমাকে তুলে নিয়ে পালাল অপহরণকারীরা। কপাল চাপড়াতে বসেন তিনি। থানায় অভিযোগ করেন। কিন্তু পরে জানা যায়, গাড়ি থামিয়ে অপহরণের নাটক ফেঁদে বৌমা নিজেই পালিয়েছে প্রেমিকের সঙ্গে!

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

দেগঙ্গা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৬ ০৩:৪৯
Share:

শ্বশুরমশাই ভেবেছিলেন, তাঁরই চোখের সামনে দিয়ে নতুন বৌমাকে তুলে নিয়ে পালাল অপহরণকারীরা। কপাল চাপড়াতে বসেন তিনি। থানায় অভিযোগ করেন। কিন্তু পরে জানা যায়, গাড়ি থামিয়ে অপহরণের নাটক ফেঁদে বৌমা নিজেই পালিয়েছে প্রেমিকের সঙ্গে!

Advertisement

দেগঙ্গার এই ঘটনায় ‘অপহরণকারী’দের এক জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, বন্ধুকৃত্য করতেই সে নাটকের কুশীলব সেজেছিল। পুলিশ ওই তরুণী, তাঁর প্রেমিক ও বাকি তিনজনের খোঁজ করছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গত ২৫ মে বিয়ে হয়েছিল সদ্য সাবালিকা মেয়েটির। শ্বশুরবাড়ি বসিরহাটে। এ বার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে পাস করতে পারেননি তরুণী। বাড়ি থেকে বিয়ের চাপ আসছিল। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, মেয়ের ইচ্ছে ছিল না বিয়েতে। কিন্তু পরিবারের চাপের কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়।

Advertisement

বিয়ের পরে নানা আনুষ্ঠানিকতা সারতে সোমবার পর্যন্ত মেয়ে-জামাই ছিল দেগঙ্গায় তরুণীর বাপের বাড়িতে। মঙ্গলবার সকালে নতুন জামাই কাজে বেরিয়ে যান। ওই দিনই বিকেলে বৌমাকে ফিরিয়ে আনতে গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন শ্বশুরমশাই এবং তাঁর দুই আত্মীয়। তরুণীকে নিয়ে দেগঙ্গার দিকে রওনা দেয় গাড়ি।

বেলা তখন প্রায় সাড়ে ৪টে। দেগঙ্গার কালিয়ানী বিল এলাকায় টাকি রোড ধরে এগোচ্ছিল গাড়ি। একটি পেট্রোল পাম্পের কাছে আসতেই লাঠি হাতে গাড়ি থামায় এক বৃহন্নলা। মেয়েটিকে হাত ধরে গাড়ির ভিতর থেকে টেনে বের করতে চায়। ইতিমধ্যে সেখানে তিনটি মোটর বাইকে হাজির হয় তিন যুবক। অভিযোগ, তরুণীর শ্বশুরমশাই ও আত্মীয়েরা প্রতিবাদ করলে ধাক্কধাক্কি করা হয় তাঁদের। তারই মধ্যে এক যুবক তরুণীকে গাড়ি থেকে বের করে একটি মোটর বাইকে বসিয়ে চম্পট দেয়। বাইকে উঠে পালায় ওই বৃহন্নলা-সহ বাকিরাও।

অপহরণের অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। বুধবার দেগঙ্গা থেকেই ধরা পড়ে এক যুবক। বৃহস্পতিবার বারাসত জেলা আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাকে ৭ দিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।

পুলিশের দাবি, জেরায় ওই যুবক জানিয়েছে, তার এক বন্ধুর সঙ্গে ওই তরুণীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ে করবে বলেও ঠিক করেছিলেন দু’জনে। মেয়েটির প্রেমিক তাঁর বন্ধুদের বলেন, জোর করে বাড়ি থেকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়েছে মেয়েটির। তাকে তুলে আনতে হবে। সেই মতোই অপহরণের ছক কষা হয়। পুলিশ জানতে পেরেছে, এক আত্মীয়ের মোবাইল থেকে ফোনে প্রেমিকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল সদ্য বিবাহিতা তরুণীটি।

তরুণীর বাবার দাবি, মেয়ের সম্পর্কের কথা জানতেন না তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘জানলে সম্বন্ধ করে ওর বিয়ের ঠিক করতাম না।’’ যদিও এ কথা কতটা বিশ্বাসযোগ্য, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। মেয়ের প্রেমের কথা জানলেও তাতে পরিবারটি রাজি হতো কি না, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

আর কী বলছেন তরুণীর স্বামী?

খানিকটা ভেঙে পড়েছেন তো বটেই। গোটা ঘটনাটা এখনও যেন ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারছেন না। বললেন, ‘‘পাঁচটা দিন ওর সঙ্গে ঘর করলাম। কিছু তো বুঝতে পারিনি। আমার মনে হচ্ছে, ওকে কেউ জোর করেই নিয়ে গিয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement